দিয়াছিলেন, চণ্ডীদাসও তেমনই মানুষী প্রেমের কাহিনী দ্বারা লুব্ধ করিয়া তাঁহার দেশবাসীকে সর্ব্ব কথার মধ্যে যাহা সার কথা তাহাই শিখাইয়াছিলেন। ভাল গায়েনের মুখে কীর্ত্তন না শুনিলে বৈষ্ণব কবিগণের পদের অর্থ সম্যক্ বুঝা যাইবে না। যেরূপ গাছ-গাছড়ার উপাদানের সঙ্গে না মিশাইলে ভেষজ সার্থক হয় না, সেইরূপ কীর্ত্তনের আসরে না গেলে মহাজনগণের স্বরূপ আবিষ্কার করা অনেকের পক্ষে দুষ্কর হইবে।
৮৷ গৌরদাস কীর্ত্তনীয়া
আমি অনেক ভাল ভাল কীর্ত্তনীয়ার কীর্ত্তন শুনিয়াছি। বর্দ্ধমানের রসিক দাস, কুষ্টিয়ার শিবু, বীরভূমের গণেশ দাস প্রভৃতি প্রসিদ্ধ গায়েনদের কীর্ত্তনে মুগ্ধ হইয়াছি, কিন্তু নদীয়ার গৌরদাসকে যেরূপ দেখিয়াছিলাম, সেরূপ আর কোন কীর্ত্তনীয়াকে দেখি নাই। এক সময়ে আমি ইংরেজী ও সংষ্কৃত নানা কাব্য পাঠে আনন্দ পাইতাম, কিন্তু পান্থ যেরূপ নানা স্থান ঘুরিয়া শেষে বাড়ীর ঘাটে নৌকা বাঁধিয়া সোয়ান্তি পায়, আমি জীবন-সায়াহ্নে সেইরূপ কীর্ত্তনের আনন্দে অন্য সমস্ত সুখ ভুলিয়া গিয়াছি। গৌর দাস কীর্ত্তনীয়ার মধ্যে যে ভক্তি, প্রেম ও কাব্যের বিকাশ দেখিয়াছি, তাহাতে আমার মন একবারে কীর্ত্তনে মজিয়া গিয়াছিল। গৌরদাসের বর্ণ ছিল কালো, দেহ ছিপছিপে, মুখ-চোখে প্রতিভার কোনই ছাপ ছিল না। পথ দিয়া চলিয়া গেলে তাঁহাকে অতি সাধারণ লোক বলিয়া মনে হইত। মৃত্যুর পূর্ব্বে তাহার বয়স হইয়াছিল ৪৮।৪৯। এই লোকটি গানের আসরে নামিলে তাহার রূপ বদলাইয়া যাইত, সে নিজে না কাঁদিয়া শত শত লোককে অশ্রুজলে ভাসাইয়া লইয়া যাইত। সে ছিল সংগীতচার্য্য। তাল মান এ সকল ছিল তাহার আজ্ঞাকারী ভৃত্য, কিন্তু প্রেমের