পীরিতি করিয়া ছাড়িয়া যাইব,
দাঁড়াব কদম্ব-তলে।
ত্রিভঙ্গ হইয়া মুরলী বাজাব
যখন যাইবে জলে।
মুরলী শুনিয়া অস্থির হইবে
সহজ কুলের বালা।
চণ্ডীদাস কহে তখন জানিবে—
পীরিতি কেমন জ্বালা।
এই দুঃখের আর কোন উপমা নাই, কারণ তাঁহার পক্ষে কৃষ্ণ-বিচ্ছেদের মত এমন দুরন্ত অসহ্য কষ্ট আর কিছুই নাই, এ ক্ষেত্রে তাঁহার উপমা তিনি স্বয়ং। সাগর শুকাইলে মহানগরী ধ্বংস হইলে, লক্ষ্মীবন্ত লোক ভিক্ষুক হইলে যাহা হয়, কৃষ্ণত্যক্তা রাধিকার উপমা তাহা দ্বারা ব্যক্ত হয় না, “হে কৃষ্ণ আমি যে কষ্ট পাইতেছি, আমার মত হইলে তাহা বুঝিবে। আমার এই ‘সম্বুনদ হেম, সম সেই প্রেম’, এই মন বিপ্লবী বাক্যাতীত উপমার ঊর্দ্ধে যে প্রেমলোক—তাঁহাতে যে হানা দেয়, “আমার হৃদয় যেমন করেছে, তেমনি হউক সে।” এইজন্য জন্মান্তরে কৃষ্ণকে রাধা হইয়া তাহার ব্যথা বুঝিতে রাধা প্রার্থনা করিতেছেন, এই পদটিতেও কেহ কেহ চৈতন্যাবতারের পূর্ব্ব সূচনা বুঝিতেছেন, ইহা চণ্ডীদাসের মনে প্রতিবিম্বিত চৈতন্য-মূর্ত্তির আগমনী গান,—রাধাভাব বুঝিতে কৃষ্ণ চৈতন্যরূপে জন্ম পরিগ্রহ করিয়াছিলেন। চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতি, এই দুই পূর্ব্ববর্ত্তী কবির এইরূপ পদ আছে,—
“হাম সাগরে তেজঘ পরাণ,
আন জনমে হব কান,
কানু হোরব যব রাযা,
তব জানব বিরহক বাধা।” (চ)