পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭২
পদাবলী-মাধুর্য্য

 যাঁহাকে রাধা বাহিরে পাইয়াছিলেন, চক্ষু বুজিলে তো তাঁহাকে দেখা যাইত না, তিনি না আসিলে তো তাঁহাকে পাওয়া যাইত না; সুতরাং একবার মনে হইত, তিনি মুঠার মধ্যে, পুনরায় তাঁহার সঙ্গে বিরহ হইত, পাছে প্রেম ভাঙ্গে, এই ভয়ে মান হইত। কিন্তু আজ যাঁহাকে তিনি পাইলেন, তিনি যেমনই বাহিরে, তেমনই ভিতরে; তাঁহাকে চক্ষু মেলিয়া বিশ্বে স্বপ্রকাশরূপে দেখা যায় এবং চক্ষু বুজিয়া ধ্যান-ধারণার মধ্যেও তেমন পাওয়া যায়। আজ খণ্ডিতা-বিপ্রলব্ধা ও কলহারিন্তরাতার পালা শেষ, আজ মাথুরের মম্মান্তিক কষ্ট আর নাই। এই ভাঙ্গা-গড়ার অতীত, সর্ব্বপ্রকার চাঞ্চল্যমুক্ত পূর্ণানন্দস্বরূপকে তিনি অখণ্ডভাবে পাইলেন, তাই বিদ্যাপতির রাধা হর্ষোচ্ছ্বাসে গাহিলেন,

‘‘আজ রজনী হাম ভাগে পোহাইনু,
পেখুন পিয়া-মুখ-চন্দ—”
“আজ মঝু দেহ, দেহ করি মানিনু,
আজ মন্তু দেহ ভেল দেহ।’’

 আজ সমস্ত সন্দেহ দূর হইল, মান-অভিমানের পালার উপর যবনিকাপাত, আজ নির্দ্বন্দ্বভাবে তাঁহাকে পাইয়াছি,

‘‘আজ বিহি মোহে, অনুকূল হোয়ল টুটল সবহি সন্দেহ’’

সুতরাং

‘‘সোহি কোকিল অব লাখ ডাকয়ু, লাখ উদর করু চন্দ,
পাঁচ বাণ অব লাখবান হউ, মলয় পবন বহু মন্দ।’’

 তখন একটা কোকিল ডাকিলে রাধিকা অস্থির হইয়া পড়িতেন, আজ এই শুভ মিলনরাত্রে লাখ বার কোকিল ডাকুক; পূর্ব্বে কামদেবের একটি সায়ক, আকাশে একটি চন্দ্রের আবির্ভাব হইলে “তব কুসুম শরত্বং শীতরশ্মিত্বমিন্দোঃ” রাধার পক্ষে অযথার্থ হইত, ইন্দুময়ুখে অগ্নির