পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
৯৩

শব্দের বাহুল্য ও উপমা-উৎপ্রেক্ষা যেন অভিসারিকার গতি কতকটা রোধ করিয়া ফেলিয়াছে। চৈতন্যপ্রেমের বন্যায় কিছু পরে অভিসারিকার ডিঙ্গি আশ্চর্য্য গতিশীলতা লাভ করিয়াছিল।

 প্রেমের জন্য অভিসার কি, তাহা চৈতন্যদেব বুঝাইয়া দিলেন। ঘর বাড়ী, আত্নীয় স্বজন—সমস্ত ত্যাগ করিয়া প্রেমযাত্রী কি ভাবে অভিসার করেন, তাহার একখানি সুস্পষ্ট পট কবিরা এবার চোখের সামনে দেখিতে পাইলেন। সে প্রেম-যাত্রীর রূপ কি কখনও ভোলা যায়? সংকীর্ত্তনের মধ্যে যে পরমানন্দের মূর্ত্ত-রূপ তাঁহারা দেখিলেন, তাহা তাঁহাদের হৃদয়ে ভাবোচ্ছ্বাস বহাইয়া দিল। বৈষ্ণব কবিরা এই অভিসারের রূপক দিয়া চৈতন্যকে যতটা বুঝাইয়াছেন, তাঁহার চরিতকারেরা তাহা পারেন নাই। এখানে রাইকিশোরীর মূর্ত্তি যেরূপ ফুটিয়াছে, বৈষ্ণব কবিতায়ও অন্য ‍কোন স্থানে তাঁহার রূপ তদ্রুপ ফোটে নাই। এজন্য বৈষ্ণবেরা অভিসারের নাম রূপাভিসার দিয়াছেন। যিনি রূপের ফাঁদে পা দিয়া, সেই আনন্দ-স্বরূপের সন্ধানে যাইতেছেন, তিনি প্রেমিকের চক্ষে অপূর্ব্ব রূপসী। রাধা এজন্য বলিতেছেন:—

‘‘তোমার গরবে, গরবিনী হাম, রূপসী তোমার রূপে।’’

রমণী-মণি শ্যাম-অভিসারে যাইতেছেন, মুখখানি পূর্ণেন্দুর মত—

‘‘একে সে তরুণ ইন্দু,  মলয়জ বিন্দু বিন্দু,
  কস্তুরী-তিলক তাহে রাজে,
পিঠে দোলে হেম ঝাপা,  রঙ্গিয়া পাটের খোঁপা,
  নাসার মুকুতারাজি সাজে।”

“শ্যাম-অভিসারে চলু বিনোদিনী রাধা,
নীলবসনে মুখ ঝাঁপিয়াছে আধা।
সুকুঞ্চিত কেশে রাই বাঁধিয়া কবরী,
কুন্তলে বুকলমালা গুঞ্জরে ভ্রমরী।