পাতা:পরশুরাম গ্রন্থাবলী ( তৃতীয় খণ্ড ) - রাজশেখর বসু.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

-স্যাপার্স অ্যান্ড মাইনাস-এর দলে সিনিয়র হাবিলদার-আমিন। বর্মা থেকে চীন পর্যন্ত যে রাস্তা তৈরি হচ্ছিল তারই জরিপ আমাকে করতে হত। আমার ওপরওকালা অফিসার ছিলেন ক্যাপ্টেন ব্যাবিট। রামতারণবাব, বললেন, ওসব বাজে কথা কি বলছেন, আপনার চাকরির বত্তান্ত আমরা শুনতে চাই না। ভূত দেখাতে পারেন তাে দেখান। দুই হাত নেড়ে আশ্বাস দিয়ে জটাধর বললেন, ব্যস্ত হবেন না সার, আমার কথাটি শেষ হবামাত্র ভূত দেখতে পাবেন। তখন জাপানীর দক্ষিণ বর্মায় পেীছেছে, তাদের আর একদল থাইল্যাণ্ডের ভেতর দিয়ে বর্মার উত্তর-পূর্ব দিকে হানা দিচ্ছে। "আমাদের সাভে পার্টি সে সময় শান স্টেটের উত্তরে কাজ করছিল। দলটি খুব ছােট, ক্যাপ্টেন ব্যাবিট, আমি, পাঁচজন গােখা সেপাই, পাঁচজন বমী কুলী, একটা জিপ, আর আমাদের তাঁব রসদ থিওডােলাইট লেভেল চেন ঝাণ্ডা ইত্যাদি বইবার জন্য চারটে খচ্চর। আমরা যেখানে ছাউনি করেছিলাম সে জায়গাটা পাহাড় আর জঙ্গলে ভরা, মানুষের বাস নেই। বাঘ ভালক হড়ার প্রভৃতি জানোয়ারের খুব উপদ্রব। বন্দুক দিয়ে মারা বারণ, পাছে শত্ররা টের পায়। ব্যাবিট সায়েবের সঙ্গে এক টিন স্ট্রিকনীনের বড়ি ছিল, জিলাটিন দিয়ে মােড়া, পেটে গেলে তিন মিনিটের মধ্যে গলে যায়। মাংসের টুকরাের সঙ্গে সেই বড়ি মিশিয়ে ক্যাম্পের বাইরে ফেলে রাখা হত, রােজই দু-চারটে জানােয়ার মারা পড়ত। একদিন গুজব শােনা গেল যে জাপানীরা আমাদের বিশ মাইলের মধ্যে এসে পড়েছে। ক্যাপ্টেন ব্যাবিট বললেন, ওহে বকশী, শুধু তুমি আর আমি একট, এগিয়ে গিয়ে দেখি চল, আর সবাই ক্যাম্পেই থাকুক। চিয়াং কাই-শেক আমাদের সাহায্যের জন্য একটা চীনা পল্টন ইউনান থেকে পাঠিয়েছেন, আজ তাদের এখানে পৌছবার কথা। দেখতে হবে তাদের কোনও পাত্তা মেলে কিনা। | আমরা দুজনে উত্তর-পূর্ব দিকে চার-পাঁচ মাইল হেটে চললম। সামনে একটা নিবিড় জঙ্গল, তার ওধারে একটা ছােট পাহাড়। সায়েব বললেন, ওই পাহাড়ের ওপর উঠে দুরবীন দিয়ে চারিদিক দেখতে হবে। অমর। জঙ্গলে ঢলম, সঙ্গে সঙ্গে জন পঞ্চাশ জাপানী আমাদের ঘিরে ফেললে। রামতারণবাব; অধীর হয়ে বললেন, ওহে বকশী, তুমি তাে কেবলই বকবক করে চলেছ। শেষকালে হয়তাে বলবে যে তুমি নিজেই একটি জাপানী ভূত দেখেছিলে। সেটি চলবে না বাপু, তােমার দেখা ভূত মানব না। জটাধর বললেন, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, আর একটু পরেই আপনারা সবাই স্বচক্ষে ভূত দেখবেন। তার পর শুনুন।ক্যাপ্টেন ব্যাবিট বললেন, বকশী, আত্মরক্ষার কোনও উপায় নেই, হাত তুলে সরেণ্ডার কর। আমরা হাত তুলতেই জাপানীরা কাছে এল। এমন রােগা হান্ডি-সার পল্টন কোথাও দেখি নি। তাদের তিন-চার জন আমাদের গাল কাঁধ হাত পা টিপে টিপে দেখতে লাগল, একজন সায়েবের কাঁধে কামড়ে দিলে, আর সবাই তাকে ধমক দিয়ে টেনে নিয়ে গেল। ব্যাবিট সায়েব একটু আধটু জাপানী ভাষা বুঝতেন। জিজ্ঞাসা করলম এদের মতলব কি ? সায়েব বললেন, মাই পওর বকশী, বুঝতে পারছ না ? এদের ভাঁড়ার শূন্য, রসদ যা আসছিল শান ডাকাতরা লুট করে নিয়েছে, সাত দিন উপােস করে আছে, খিদেয় পেট জলছে। তার পর দেখলম, ওদের কয়েকজন একটা উনন বানিয়ে আগুন জেলেছে, তার ওপর মস্ত একটা ডেকচি চাপিয়েছে। ১৪