পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যে তাকে ঘৃণা করি, এটা সে বুঝ্‌তে পার্‌ত। কারণ, আমি তার কাছে গেলে সে সরে যেত। নয়ত কেমন-যেন জড়সড় হয়ে দোষীর মত বসে থাক্‌ত। আর এক আশ্চর্য্যের কথা, আমার সঙ্গে এতদিন সে একটাও কথা বলে নি। এক অন্ধ, অন্ধকার মৌনের মত, সে আমার প্রাণমনের উপরে চেপে বসেছিল।

 তাকে কথা কওয়াবার জন্যে আমিও কিছু ব্যস্ত ছিলাম না। আমিও তার সঙ্গে কথা কই নি।

 এমনিভাবে একবছর গেল। এই একবছর আমরা কেউ কারুর সঙ্গে একটাও কথা কই নি। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এমন নীরবতা যে থাক্‌তে পারে, আগে আমার এ জ্ঞান ছিল না। ওঃ! তোমরা এ কল্পনা কর্‌তে কর্‌তে না। এ নীরবতা অসহ্য— অসহ্য—অসহ্য!—হ্যাঁ, অসহ্য বটে,—তবু এ নীরবতা ভঙ্গ কর্‌বার সাহস আমাদের কারুর ছিল না।

 আমি জীবনটাকে উপভোগ কর্‌ছিলাম।

 আমার যৌবনের ভিতরে অনেকখানি ফাঁক্ থেকে গিয়েছিল। ইচ্ছার বিরুদ্ধে যার পূর্ণ যৌবনের তপ্ত রক্তধারা অপব্যয় হয়, তার কণ্ঠ সকলে বুঝ্‌তে পার্‌বেন না।

 বন্ধুরা পরামর্শ দিলেন, ক্ষতিপূরণ কর। লোহার সিন্ধুকে পঞ্চাশ হাজার টাকার কোম্পানীর কাগজ মজুৎ রেখে, বাবা (অনিচ্ছাসত্বে কিনা, জানি না! পরলোকে প্রস্থান করেছিলেন। —কিন্তু দুঃখের বিষয়, সিন্ধুকের চাবীটি তিনি ট্যাঁকে করে নিয়ে যেতে পারেন নি।

১২১