পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্মৃতির শ্মশানে

হয়। সুখেন্দুর অনেকগুলি ভক্ত পাঠকের মধ্যে ডাক্তার বরেন্দ্রনাথও একজন।

 বরেন্দ্রনাথের সঙ্গে সুখেন্দুর আলাপ বেশীদিন হয় নাই। কিন্তু পৃথিবীতে দেখা যায়, একজনের সঙ্গে জন্মাবধি একত্র বাস করিয়াও প্রকৃত বন্ধুত্বের মধুর সম্বন্ধ হইল না, কিন্তু তিনটি দিনের আলাপে আর একজনের সঙ্গে হয়ত, প্রাণের বিনিময় হইয়া গেল। আসল কথা, মনের মিল, বন্ধুত্বের প্রথম সোপান। আর এইজন্যই, দুইদিনের পরিচয়েই সুখেন্দু ও বরেন্দ্রনাথের ভিতর হইতে ব্যবধানের যবনিকা সরিয়া গিয়াছি ল।

 টেবিলের উপরে ব্যালজ্যাকের পাষাণময়ী মূর্ত্তির নিষ্পলক দৃষ্টির সামনে বসিয়া সে দিন প্রভাতে সুখেন্দু গল্পরচনায় নিবিষ্টচিত্ত ছিল।

 ঘরের দেওয়ালের চারিদিকে স্বদেশী-বিদেশী সাহিত্যিকগণের মূর্ত্তিচিত্র বিলম্বিত। একদিকে সারি সারি কতকগুলি আল্‌মারি সাজান, তাহাদের ভিতর হইতে সোনার-জলে-লেখা পুস্তকের নামগুলি ঝক্‌মকিয়া উঠিতেছে। সুখেন্দুর ঠিক সামনেই একটি খোলা জানালা। তাহার ভিতর দিয়া চাহিলে বাহিরের বাগানের সজীব সবুজ রংএর মাঝে মাঝে বাতাসে-দোদুল গোলাপ ফুলের রাঙ্গা রাঙ্গ। মুখগুলি নজরে পড়িয়া যায়। লিখিতে লিখিতে সুখেন্দুর মস্তিষ্ক যখন ক্লান্ত হইয়া পড়ে, তখন সে মুখ তুলিয়া উদ্যানের দিকে দৃষ্টিপাত করে। এবং নবীন শ্যামলতার সেই অভিরাম লীলা দেখিয়া তাহার মস্তিষ্ক আবার সতেজ হয়, তাহার প্রাণে আবার নূতন উদ্যম আসে।

 সুখেন্দু একমলে-লিখিতেছে, এমন সময়ে ভৃত্য আসিয়া তাহার হাতে একখানি ‘কার্ড’ দিল।

১৯