পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্মৃতির শ্মশানে

 বরেন্দ্রনাথ ধীরে ধীরে সরযূর দুই স্কন্ধের উপরে আপনার দুই হাত রাখিলেন। তাহার পর পূর্ণদৃষ্টিতে তাহার সজল চোখের দিকে চাহিয়া স্থিরস্বরে কহিলেন, “সরযূ! কোন স্ত্রীলোক যদি এমনভাবে আপনার দুর্ব্বলতাকে দমন করতে পারে, তাহলে তাকে দোষী মনে করা উচিত, না তার প্রশংসা করা উচিত, এ কথাটা তুমিই বল!”

 সরযূ মাথা হেঁট করিয়া বসিয়া রহিল—তাহার বুকের উপর হইতে যেন একটা মস্ত বোঝা নামিয়া গেল।

 পরদিন ভোরবেলা বরেন্দ্রনাথ শুনিলেন, সুখেন্দুবাবু আজ কলিকাতায় ফিরিবেন।

 তিনি তখনই সুখেন্দুর কাছে ছুটিয়া গেলেন। বলিলেন, “হাঁ সুখেন্দু বাবু, আপনি নাকি কল্‌কাতায় পালাতে চান?”

 সুখেন্দু বলিল, “পালাতে চাইনা, যেতে চাই।”

 “উহু—সেটি হবে না! আমরা ছেড়ে দিলে তবে ত যাবেন? আমি আপনার হাত ধরে থাক্‌বো, আর লতাকে শিখিয়ে দেব—সে আপনার গোঁফ ধরে থাক্‌বে, দেখি, কেমন করে যান আপনি!”

 সুখেন্দু ম্লান হাসি হাসিয়া বলিল, “আমাকে মাপ কর্ব্বেন বরেন্দ্রবাবু! আমি আর কোনমতেই থাক্‌তে পার্ব্ব না। আপনি হাত ধরলেও না, লতা গোঁফ ধর্‌লেও না! ভাববেন না, আপনার এখানে আমার কিছু কষ্ট হয়েচে বলে আমি চলে যাচ্ছি! সত্যিকথা বল্‌চি, আপনাদের কাছে রাজার হালে ছিলুম। কিন্তু না গেলে নয়, তাই যেতে হলো।”

৫৫