পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

 পায়রাদুটি পরস্পরকে বড় ভালবাসিত। অমন ভালবাসা বুঝি মানুষের ভিতরেও দেখা যায় না। তাদের দিকে চাহিলেই দেখিতাম, তারা দুজনে দুজনকে আদর করিতেছে। কখনও কপোতী, কপোতের রঙ্গিণ বুকে আপনার ছোট মাথাটি বুলাইয়া দেয়; আবার কখনও কপোত সপ্রেমে ঊর্দ্ধমুখী কপোতীর চঞ্চুচুম্বন করে। চঞ্চুচুম্বনের অবকাশে মাঝে মাঝে তারা চতি দৃষ্টিতে মাথা ঘুরাইয়া চারিদিক্‌টা এক-একবার দেখিয়া লইত। তারা যেন ঠিক দুটি নবীন প্রেমিক-প্রেমিকা—অন্যে দেখিতে পাইলে বড় লজ্জা! তাহাদের একটি বাহিরে গেলে অন্যটি ব্যাকুলভাবে পথ চাহিয়া বসিয়া থাকিত।

 এক-একদিন কপোত বাহিরে গেলে, অন্য কোন কপোত আসিয়া হাজির হইত। আসিয়া, সগর্ব্বে পা ফেলিয়া, চক্র দিয়া ঘুরিয়া ঘুরিয়া গলা ফুলাইয়া কূজন করিতে করিতে কপোতীকে বুঝাইবার চেষ্টা পাইত যে,—সে চলিতে জানে, নাচিতে জানে, গায়িতে জানে! কপোতী কিছু বলিত না,—আপনার বাসার সামনেটিতে বুকে ভর্ দিয়া বসিয়া বসিয়া, নীরবে ত্রস্ত চোখে আগন্তুকের ‘রকম-সকম’ নিরীক্ষণ করিত।

 কপোতীর দিক্ হইতে সাড়া না পাইয়া আগন্তুক হঠাৎ নাচ বন্ধ করিয়া বাসার ভিতরে গিয়া বসিত। কপোতী ভয় পাইয়া আরও ভিতরে সরিয়া যাইত—আগন্তুককে ঠুক্‌রাইয়া দিত। এমন অভ্যর্থনা যুৎসই নয় ভাবিয়া কোনদিন আগন্তুক আপনিই সরিয়া পড়িত, আবার কোনও দিন-বা আমার স্ত্রী “হতভাগা পায়রা, রোস্ ত” বলিয়া, ছুটিয়া গিয়া তাহাকে তাড়াইয়া দিত।

৬০