পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবন-যুদ্ধে

সরলা ছোট মেয়েটিকে স্তন্যপান কারাইতেছে। পাশে বসিয়া ছেলেটা আর্ত্তকণ্ঠে চ্যাঁচাইতেছে।

 তিনদিন হইল, কুবেরচন্দ্র কোঠাবাড়ী ছাড়িয়া এখানে উঠিয়া আসিয়াছে। আজ সকালে তাহাদের অন্ন পর্য্যন্ত জোটে নাই ৷

 খোকার চীৎকার কিছুতেই থামিল না দেখিয়া সরলা তিক্তকণ্ঠে কহিল, “ওরে, আর যে পারি না, হাড় যে ভাজা ভাজা হয়ে গেল! তোরাও মর্ আমিও মরে জুড়োই। এমন কপাল করে এসেছিলুম যে, স্বামীও স্ত্রীলোকের অধম!”

 কুবের তাড়াতাড়ি উঠিয়া বাহিরে গেল। সরলা বলিল, “আবার রাগটুকু আছে,—ফুলের ঘায়ে মূর্চ্ছা যান!”

 তাহার এই রূপ, এই যৌবন, এই আশা—একটা গরীবের হাতে পড়িয়া সকলই ব্যর্থ! স্বামীর দারিদ্র্যকে যখন ধিক্কার দিত, সরলা তখন ভুলিয়া যাইত যে, সে নিজেও গরীবের মেয়ে! আর, স্বামীর অভাবকাতর মুখ দেখিয়াও সে আপনার কর্কশ কথা বন্ধ করিতে পারিত না। শুধু কুবের বলিয়া নয়, তাহার রূপকে ব্যর্থ করিয়াছেন বলিয়া বিধাতাকেও সে অমনি-অমনি ছাড়িয়া দিত না! “পোড়াকপালে বিধাতা! অদেষ্টে যদি এত ছিল, তবে এমন রূপ, এমন যৌবন কেন?” ঠিক কথা!

 কুবেরচন্দ্র রাস্তায় বাহির হইয়া বরাবর চলিল। আজ এক বাল্যবন্ধুর কথা তাহার মনে পড়িয়াছে। ভাবিল, ভবেশ আমাকে বড় ভালবাসিত, আজ দুঃসময়ে হাত পাতিলে, নিশ্চয়ই সে অমনি ফিরাইয়া দিবে না।

 মস্ত এক তেতলা বাড়ী। কুবের যখন সেই বাড়ীর ফটকের সুমুখে আসিয়া দাঁড়াইল, তখন ফটকের পাশে বসিয়া, বামকরতলে ‘শুকা’ দোক্তা

৮৯