পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় ভাগ
১৪৭

পারে! দিবসাপগমে যিনি কাঞ্চনবাসযষ্টির উপরে সেই ময়ূরকে নাচাইয়া একদিন আনন্দ উপভোগ করিতেন, তাঁহার কাছেই যাইবার জন্য’ত মেঘকে দৌত্যকার্য্যে ব্রতী করা হইয়াছে। তাই দেখিতে পাই, কালিদাসের মেঘদূতে ময়ূর কতখানি স্থান অধিকার করিয়াছে।

 কিন্তু তাই বলিয়া কি কবিবরের বর্ণনায় কেবলমাত্র বর্ণ ও শব্দপ্রাচুর্য্যে পাখীটিকে তাহার বাস্তব জীবন হইতে বিচ্যুত করিয়া কবির খেয়াল-প্রসূত একটা অবাস্তব জিনিষে পরিণত করা হইয়াছে? রোমান্সের কুহেলিকায় আমরা কি আসল পাখীটির খাঁটি পরিচয় পাইব না? তাহার নয়ন কি সজল নয়, অপাঙ্গ শুক্ল নয়? আসন্ন বর্ষায় উত্তরপশ্চিম ভারতের পর্ব্বতে তাহার কেকাধ্বনি কি শ্রুত হয় না? মেঘের সহিত তাহার সম্বন্ধ দেখিয়া সাধারণ লোকে কি তাহাকে মেঘসুহৃৎ বলিতে পারে না? পুত্রবৎসল ভবানী ইন্দীবরদলশোভিতকর্ণে যে বর্হটি স্থাপিত করেন, যে ময়ূরপুচ্ছ গোপবেশধারী বিষ্ণুর শিরোভূষণ, তাহা কি উজ্জ্বলরেখাবলয়ি নহে? আবার কবি যে তাহাকে গলিত অর্থাৎ স্বয়ংছিন্ন বর্হ বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন, তাহাও কি বৈজ্ঞানিক হিসাবে সত্য নহে? এই সমস্ত বিষয়ের আলোচনা করিবার পূর্ব্বে মেঘদূত হইতে ময়ূরের রূপ ও স্বর-বর্ণনাসূচক কয়েকটি শ্লোকাংশ উদ্ধৃত করিবার লোভ সম্বরণ করিতে পারিলাম না—

জ্যোতির্লেখাবলয়ি গলিতং যস্য বর্হং ভবানী,
পুত্ত্রপ্রেম্না কুবলয়দলপ্রাপি কর্ণে করোতি।
ধৌতাপাঙ্গং হরশশিরুচা পাবকেস্তং ময়ূরং
পশ্চাদদ্রিগ্রহণগুরুভির্গর্জ্জিতৈর্নর্ত্তয়েথাঃ॥

 যাহার উজ্জ্বল রেখাবলয়সমন্বিত বর্হটি স্বতঃ স্খলিত হইলে পর যাহাকে পুত্রবৎসলা ভবানী ইন্দীবরদল-শোভিত কর্ণে ভূষণার্থ স্থাপিত করেন, হরশশিকিরণ কর্ত্তৃক ধৌতাপাঙ্গ সেই ময়ূরকে মেঘ অদ্রিগ্রহণগুরু গর্জ্জন দ্বারা সহজে নৃত্য করাইতে সমর্থ হইবে।