পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় ভাগ
১৮৫

পর্ব্বতে পর্ব্বতে ময়ূরের নৃত্যের কথা পূর্ব্বেই বিবৃত করিয়াছি। ভূধরকে কেমন বিচিত্র সৌন্দর্য্যে ইহারা মণ্ডিত করিতে পারে, তাহার একটি চিত্র ঋতুসংহারের কবি দিয়াছেন। পর্ব্বতের গাত্র বহিয়া প্রস্রবণ ঝরিয়া পড়িতেছে, শ্বেত উৎপলের আভায় মণ্ডিত হইয়া মেঘ উপলখণ্ডগুলিকে চুম্বন করিতেছে, নৃত্যপরায়ণ শিখীদিগের আনন্দনর্ত্তনে আকুল হইয়া ভূধরগুলি প্রকৃতিকে সমুৎসুক করিয়া তুলিতেছে—

সিতোৎপলাভাম্বূদচুম্বিতোপলাঃ
সমাচিতাঃ প্রসবণৈঃ সমন্ততঃ।
প্রবৃত্তনৃত্যৈঃ শিখিভিঃ সমাকুলাঃ
সমুৎসুকত্বং জনয়ন্তি ভূধরাঃ॥

 বর্ষার এই নৃত্যপরায়ণ ময়ূর শরদাগমে আর উন্নতমুখ হইয়া গগন নিরীক্ষণ করে না,—পশ্যন্তি নোন্নতমুখা গগনং ময়ূরাঃ। মেঘদূত প্রসঙ্গে বলিয়াছি যে বর্ষাকালই ময়ূরের গর্ভাধানকাল। ঋতুসংহারে দেখিতে পাইতেছি যে, শরৎকালে মদন নৃত্যপ্রয়োগরহিত শিখীদিগকে ত্যাগ করিয়া কলকণ্ঠ হংসকে আশ্রয় করিতেছেন—

নৃত্যপ্রয়োগরহিতাঞ্ছিখিনো বিহায়।
হংসানুপৈতি মদনো মধুরপ্রগীতান্।

 আমরাও এই নৃত্যপ্রয়োগরহিত ময়ূরকে ত্যাগ করিয়া বিহগান্তরকে আশ্রয় করিব। নীহারপাতবিগমে শিশিরাবসানে যাহার কণ্ঠধ্বনি প্রিয়াবদননিহিত যুবকের চিত্ত ম্রিয়মাণকোকিল করিয়া ফেলে; গৃহকর্ম্মরতা লজ্জাবনতা কুলবধূর হৃদয় ক্ষণেকের নিমিত্ত পর্য্যাকুল করিয়া তুলে; যাহা বায়ুভরে কম্পমান কুসুমিত সহকারশাখার মধ্য দিয়া প্রসারিত হইয়া দিগ্‌বিদিকে