পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম ভাগ
৪৯

 এস্থলে প্রশ্ন: উঠিতে পারে যে, উল্লিখিত বিষয়গুলির প্রতি পুঙ্খানুপুরূপে লক্ষ্য রাখিয়া কিরূপে প্রত্যেক পক্ষিমিথুন সুনির্ব্বাচিত হইতে পারে। কারণ, পক্ষী সংগ্রহ করিতে হইলে পালককে পক্ষিব্যবসায়িগণের নিকট হইতে পাখী ক্রয় করিতে হইবে; পক্ষিব্যবসায়িগণ হয় ত অনেক সময়ে নিজেই বনভূমি হইতে পক্ষী ধৃত করিয়া থাকে, অথবা শিকারীদের নিকট হইতে ক্রয় করিয়া নিজ নিজ দোকানে অধিক লাভে পুনর্বিক্রয়ের নিমিত্ত সাজাইয়াপক্ষিমিথুন নির্ব্বাচনের উপায় রাখে। তাহারা পাখীগুলির ইতিবৃত্ত আদৌ অবগত নহে; ইহারা যখন নিজেরাই অজ্ঞ, তখন ক্রেতাদিগকে কেমন করিয়া পক্ষিমিথুনের বয়স, বংশ, জ্ঞাতিত্ব প্রভৃতির দোষগুণ জানাইয়া দিবে? বাস্তবিক এরূপ স্থলে কোন ইতিহাস পাওয়া না গেলেও পক্ষিমিথুন নির্ব্বাচনকালে পালক উভয়ের

    বর্গের রুগ্ন ও দুর্ব্বল হইবার সম্ভাবনা অধিক; কিন্তু তিনি স্বীকার করিলেন যে, স্বাধীন বন্য বিহঙ্গগণের মধ্যে প্রায়ই জাতিসম্পর্কীয় দাম্পত্য স্থাপিত হইয়া সন্তান উৎপন্ন হইয়া থাকে। উক্ত প্রশ্নের দ্বিতীয় উত্তর উল্লিখিত imagazineএর April সংখ্যায় Tavistockএর marquis মহোদয় কর্ত্তৃক প্রদত্ত হইল। তিনি বলিলেন যে, জ্ঞাতিসম্পর্কীয় দাম্পত্য হেতু বিপদের আশঙ্কা অনেক সময়ে অতিরঞ্জিত হইয়া থাকে; স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া একবার পক্ষিমিথুন সুনির্ব্বাচিত হইলে উহাদিগের সন্তানসন্ততির মধ্যে পরস্পর জ্ঞাতিসম্পর্ক সত্ত্বেও দাম্পত্য-সম্বন্ধ স্থাপিত হইলে তিন চার পুরুষ ধরিয়া বিপদের আশঙ্কা নাই বলিলেও চলে। কিন্তু পক্ষিমিথুনের মধ্যে কোন প্রকার দোষ বর্ত্তমান থাকিলে, সন্তানে উহা অধিকমাত্রায় স্পষ্টরূপে সঞ্চারিত হইবার সম্ভাবনা। তিনি আরও লিখিয়াছেন যে, এই প্রকার অত্যন্ত নিকট জ্ঞাতি-সম্পর্কীয় দাম্পত্য সারসবিহঙ্গগণের (cranes) মধ্যে এত অধিক প্রচলিত দেখা যায় যে, ইহা একরূপ উহাদের অভ্যাসে পরিণত হইয়াছে। সহজ অবস্থায় এক জোড়া সারস পক্ষী প্রায় দুটি সন্তান উৎপাদন করিয়া থাকে—একটী পুং অপরটি স্ত্রী; এই দুইটি পক্ষিশাবক বয়ঃপ্রাপ্ত হইয়া পরস্পর আজীবন মিলিত হইয়া থাকে। তবে উহাদের মধ্যে হঠাৎ যদি একটির মৃত্যু ঘটে, তাহা হইলে অপরটিকে আর এক বিহঙ্গের সহিত কদাচিৎ মিলিত হইতে দেখা যায়।