পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম ভাগ
৫৯

অনুকরণে সাজাইয়া দিতে হইবে। তখন সামান্য চেষ্টায় আবদ্ধ পক্ষিমিথুন উপযুক্ত বাসা প্রস্তুত করিয়া ফেলিবে। পাশ্চাত্য-পক্ষিপালক কেনেরি পক্ষীর বাসা তৈয়ার করিবার জন্য এক প্রকার কাঠের ছাঁচ (mould) প্রস্তুত করিয়াছেন। উহাকে উত্তপ্ত করিয়া খড়কুটাগুলি উহার গাত্রে চারিপার্শ্বে কিছুক্ষণ চাপিয়া ধরিলেই কেনেরি পক্ষীর বাস সহজেই নির্ম্মিত হইয়া যায়; তখন তপ্ত কাষ্ঠখণ্ডটাকে বাহির করিয়া লইতে হইবে। এস্থলে মানুষের সাহায্য ব্যতীত পাখী যে তাহার বাসা রচনা করিতে পারিল না, তাহার সমস্ত চেষ্টা যে কেবলমাত্র খড়কুটার স্তূপে পরিণত হইল, ইহার প্রধান কারণ এই যে, এই কৃত্রিম গৃহমধ্যে সে অনুকরণ করিবার কিছুই পাইল না। শুধু Instinct বা সহজসংস্কারের বশবর্ত্তী হইয়া যদি সে নীড়নির্ম্মাণে সম্যক্‌রূপ সফলপ্রযত্ন হইত, তাহা হইলে এই ঘনবিন্যস্ত উপকরণস্তূপের উপর অযত্নরক্ষিত ডিম্বগুলি পালকের দৃষ্টিপথে পতিত হইত না; পালককে সেই ডিম্ব-রক্ষার জন্য সযত্নবিন্যস্ত খড়কুটায় বাসা তৈয়ার করিয়া দিতে হইত না।

 স্বাধীন অবস্থায় পাখীরা অনুকরণ করিবার অনেক সুবিধা পায়। অতি শৈশবে পক্ষিশাবক তাহার বাসাটিকে ভাল করিয়া দেখিবার যথেষ্ট অবসর পায়;—আবার এক বৎসর দেড়বৎসর পরে যখন সে নিজের বাসা নির্ম্মাণ করিতে যায়, তখন প্রায়ই সে তাহার জন্মস্থানে[১]

  1. এই যে জন্মস্থানে ফিরিয়া আসা,—পাখীর স্বল্পপরিসর জীবনকাহিনীর মধ্যে ইহা একটি অত্যন্ত সুন্দর ব্যাপার। শুধু যে পক্ষিশাবকের জন্মস্থানের দিকে একটা টান আছে তাহা নহে; প্রৌঢ়বয়সেও পক্ষিদম্পতি তাহাদিগের প্রথম-রচিত নীড়ের সন্ধানে ঘুরিয়া ফিরিয়া প্রত্যাবর্ত্তন করে। যে ঋতুতে তাহারা সাধারণতঃ বাসা তৈয়ার করে ঠিক সেই ঋতুতেই এই যে যৌবনের অবসানেও তাহাদের প্রথম যৌবনের প্রথম রচিত প্রমোদভবনের স্মৃতিকে জাগাইয়া রাখিবার চেষ্টা,—এমন বিস্ময়কর ব্যাপার মানবজীবনেও বিরল। মিঃ চার্লস ডিক্‌সন্ তাঁহার Bird’s Nests নামক গ্রন্থে পক্ষীর জন্মস্থানপ্রিয়তার উল্লেখ করিতে ভুলেন নাই; এমন কি কয়েকটি পক্ষী যে বাসা করিবার সময় আসিলে, ঠিক যে স্থানে