পাতা:পাশাপাশি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুনীল বলে, তাহলে আপনি যেমন স্বাধীন জীবন ভালবাসেন, আমিও তেমনি বাড়ীতে কর্তালি করতে ভালবাসি। ওরাও তাই বলে। বৌ কর্তালি মানবে না। বলেই নাকি আমি বিয়ে করি না । তারা দুজনেই ভাবে, সত্যই কি তাই ? না। আর কোন মানে আছে তাদের এরকম জীবন যাপনের ? মায়া ভাবে, বিয়ের নামে না হয় তার বিতৃষ্ণ কিন্তু এমন একটা পুরুষ কি জগতে নেই। যার জন্য প্ৰাণটা তার একটু উতলা হয় ? চব্বিশ পঁচিশ বছর বয়স হল, আজও হৃদয়টা যেন ঠাণ্ডা বরফ হয়ে আছে! অন্য দিকে না হোক, বাড়ীর মানুষ বাইরের মানুষের হাসি কান্নায় তার হাসি পাক কান্না আসুক, শাড়ী পড়তে সিনেমা দেখতে বেড়াতে ভালবাসুক, আরামবিলাস পছন্দ করুক-ওই দিক দিয়ে তার হৃদয়টাও কি সুনীলের মত ভেঁাতা। সুনীলের সঙ্গেই তো কতকালের পরিচয়, সকলের চেয়ে বেশী ঘনিষ্ঠতা। এমন সহজভাবে প্ৰাণ খুলে কথা তো আর কারে সঙ্গে বলতে পারে না। অথচ এই সুনীলকে পৰ্য্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বেশী আর কিছু ভাববার চেষ্টা করলে মোটেই জমে না। ভাবনাটা, একটু রোমাঞ্চও হয় না ! একটা আতঙ্ক বোধ করে মায়া । একটা দুর্বোধ্য কষ্ট অনুভব করে। সুনীল নিজের ঘরে বসে ভাবে । রাত্রের খাওয়া শেষ হয়নি, সংসারের কলরব কানে ভেসে আসে। সত্যি, এটা কার সংসার ? কেন সে এই সংসার নিয়ে মেতে আছে, আয় বাড়াবার জন্য সকালে আরেকটা টুইসনি খুজিছে ? অথচ ভালবাসা তো টের পায় না বাড়ীর মানুষগুলির জন্য। সে কি সত্যই স্বষ্টিছাড়া মানুষ, রক্তমাংসের তৈরী নিছক একটা যন্ত্র ? এমনি একটা বঁকা যন্ত্র যে তার দেহটার নিয়মমত শুধু ভাতের খিদে পায় অন্য কোন খিদে পায় না ? একমাত্ৰ মায়া ছাড়া কোন মেয়ের সঙ্গে মিলতে মিশতে পৰ্য্যন্ত ভাল লাগে। "מ