পাতা:পাশাপাশি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সে নিষ্ঠুর। কাজেই তাকেই সে ভালবাসে। এ নিষ্ঠুর হৃদয় জয় না করতে পারলে বেঁচে থেকে কি হবে ? এরকম মেয়ের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হওয়াও এক বিপদের কথা । নন্দার সঙ্গে নিশ্চিন্ত মনে মেলামেশা করা চলে । আজ তার কথা শুনে সে আরও নিশ্চিন্ত বোধ করছে। নন্দার স্বামী একটি ইংরাজী কাগজের মালিকানার দায় চাপিয়ে রেখে গেছে তার ধাড়ে। এ দায় তুচ্ছ করার সাধ্য তার নেই। প্ৰমোদ বেঁচে থাকতে কাগজটার পিছনে যথা সর্বস্ব ঢালা হচ্ছে, শেষ পৰ্য্যন্ত তাদের অবস্থা কি দাড়াবে এদিকটা নিয়েই হয় তো যেটুকু সে মাথা ঘামােত, কাগজটার জন্য বিশেষ মাথা ব্যথা ছিল না। প্ৰমোদ মারা যাবার পর বাপের উপর কাগজটা চালাবার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েও সে খুব বেশী দায়িত্ব বোধ করেনি। সে মেয়েমানুষ, খবরের কাগজ চালাবার ব্যাপারে তার কি করার अicछ ? কিন্তু কাগজ ভাল না চলায় বাপ যেই কাগজটা বন্ধ করে দেবার কথা বলেছে তখনি টনক নড়ে গেছে নন্দার। সর্বস্ব দিয়ে স্বামী তার যে কাগজটি চালু করেছিল, যে কাগজটি চালাবার জন্য প্ৰাণপাত চেষ্টা করেছিল, আজ সে কাগজ তুলে দেবার কথা ভাবছে তার বাবা ? একি সর্বনাশের কথা । কাগজটা বন্ধ করা তার কাছে সর্বনাশের সামিল বলেই এবার সে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়েছে। হোক সে মেয়েমানুষ, সে ছাড়া আর কে আছে যে দরদ দিয়ে কাগজটা চালু রাখার চেষ্টা করবে ? নিজেকে তৈরী করতে তাই সে উঠে পড়ে লেগেছে। শচীন যদি শেষ পৰ্যন্ত কাগজ চালাবার ভার বইতে অস্বীকার করে নিজেই সে দায় ঘাড়ে নেবে, ঋণপণে চেষ্টা করে দেখবে কাগজটা বঁচিয়ে রাখতে পারে। কিনা।