ছিল, অবলীলাক্রমে পরিখা ও প্রাচীর উত্তীর্ণ হইয়া নগর মধ্যে প্রবেশ করিয়াছিল ও এক মুহূর্ত্তের মধ্যে সব শেষ হইয়া গিয়াছিল। নগররক্ষীরা কেহই জীবিত নাই, একজন চলচ্ছক্তিবিহীন বৃদ্ধ ভিক্ষু দক্ষিণ নগরতোরণের আকাশকক্ষে লুক্কায়িত থাকিয়া সমস্ত ঘটনা দেখিয়াছেন। কয়েকজন নগরবাসী নগরধ্বংসের পর আসিয়া মৃতদেহের সৎকার করিয়া গিয়াছে। তাহারা সকলেই পার্ব্বত্যভূমিতে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছে। শকগণের অত্যাচারের আশঙ্কায় কেহই সমতল ভূমিতে আসিতে চাহে না।
দিনের পর দিন যায়, আমাদিগের নিকটে আর মানব সমাগম হয় না। ক্রমে প্রদক্ষিণের পথ তৃণসঙ্কুল হইয়া উঠিল, বেষ্টনীর মধ্যে ও প্রান্তরে নির্ভয়ে মৃগযূথ বিচরণ করিতে আসিত, কিছুকাল পরে দৃষ্ট হইল, নগরে ও নগর-প্রাকারে মহাকায় বৃক্ষ সকল জন্মিয়াছে, পাষাণনির্ম্মিত প্রাচীর বেষ্টিত নগর দেখিলে বোধ হইত যেন উহা কোন শ্রেষ্ঠির সুরক্ষিত উদ্যান। ক্রমে প্রান্তরেও বৃক্ষ জন্মিতে লাগিল। কিয়ৎকাল পরে নগর আর নয়নগোচর হইত না। আমার পার্শ্বে একটি লতা জন্মিয়াছিল, দারুণ নিদাঘ উত্তাপেও আমার ছায়া পাইয়া সে জীবিতা ছিল, সে অনেক কথা কহিত, কিন্তু তাহার ক্ষীণস্বর আমার কর্ণ পর্য্যন্ত আসিত না। সেই জন্যই বোধ হয় সে বেষ্টনীর স্তম্ভ অবলম্বন করিয়া আমার নিকটে উঠিয়া আসিল। সে আসিয়া আমার পরুষ দেহ বেষ্টন করিয়া রহিল। সে যতদিন ছিল ততদিন তাহাকে অতীতের কথা বলিতাম, সে শুনিয়া বিস্মিতা হইত। তাহার জীবনে সে কখন মনুষ্য দেখে নাই, সুতরাং শ্বেত, কৃষ্ণ ও মিশ্রবর্ণের কথা শুনিয়া সে বড়ই বিস্মিত হইত। একটি ক্ষুদ্র অশ্বত্থবৃক্ষ স্তূপশীর্ষস্থ ছত্রের উপরে জন্মগ্রহণ করিয়াছিল। ক্রমে সেই ক্ষুদ্র বৃক্ষ মহাকায়
৭১