পাতা:পুতুলনাচের ইতিকথা - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এ দিকে কুসুমের চোখে এতক্ষণে জল আসিয়া পড়িয়াছে । শশীর কাছে মনের আবেগকে এমন স্পষ্টভাবে চোখের জলে কুসুম কোনদিন স্বীকার করে নাই । * তবে সে বড় শক্ত মেয়ে, দুবার জোরে ফ্লোরে শ্বাস টানিয়া আর দুবার আঁচলে চোখ মুছিয়াই আবেগ সে আয়ত্তে আনিয়ে ফেলিল । বলিল, এমন হবে ভাবি নি ছোটবাবু। তাহলে,কোনকালে গা ছেড়ে চলে যেতাম । কুহুম আর কিছুক্ষণ চোখের জল ফেলিলে যে শশী হঠাৎ ক্ষ্যাপার মতো বিনা বাক্যব্যয়ে তাকে দুহাতে জড়াহিয়া ধরিত তাতে সন্দেহ ছিল না, কিন্তু কুমামের অনুযোগগুলি তাকে দমাইয়া রাখিল । এ কথা সে ভুলিতে পারিল না যে এতকাল পরে ও-ভাবে কুসুমের সমস্ত নালিশের জবাব দেওয়া আর না । মুখখানা শশীর একটু পাংশু দেখাইতেছিল। কি বুলা যায় কুক্কমকে, কি করা যায় ! কে জানিত মোটে দুদিনের নোটিসে কুসুম তাকে এমন বিপদে ফেলিবে, তার গুছানো মনের মধ্যে এমন ওলোট-প্যালোট আনিয়া দিবে ! কুনুমের কাছে বসিয়া থাকিলে, দুদিন পরে সে যে চিরদিনের জন্য চলিয়া যাইবে এই চিন্তার কষ্ট তরঙ্গের মতো পলকে পলকে অবিরাম উথলিয়া উঠিয়া তাকে এমন উতলা করিয়া তুলিবে, এ ধারণা শশীর ছিল না। কাল কথাটা শুনিয়া অবধি শশীর মনে নানা বিচিত্ৰ ভাবধারা উঠিতেছিল, আজক সকালে সে সমস্ত যেন শুধু একটা কটু ক্লেশে পরিণত হইয়া গিয়াছে। 歌 কুসুমের যে শরীরটা আজ অপার্থিব সুন্দর মনে হইতেছিল। তার সমস্তটা শশী জড়াইয়া ধরিতে পারিল না, হঠাৎ করিল কি, খপ করিয়া কুসুমের একটা হাত ধরিয়া ফেলিল। কুসুম একটু অবাক হইয়া গেল । দুজনের মধ্যে ব্যৰধান ছিল, তাতে টান পড়ার জন্যই বোধ হয়। কুসুম একটু সরিয়াও আসিল, কিন্তু যা কথা বলিল তা অপূর্ব, অচিন্তিত । কতবার নিজে যেচে এসেছি, আজকে ডেকে এনে হাত ধারা-টির কি উচিত ছোটবাবু? রেগো-টেগে উঠতে পারি তো আমি ? বড় বেয়াড় রাগ আমার ! শুনিয়া শশীর আধো-পাংশু মুখখানা প্ৰথমে একেবারে শুকাইয়া গেল । কে জানিত কুসুমকে এত ভয়ও শশী করে ? তবু কুসুমের হাতখানা সে ছাড়িল না । বলিল, রোগো, কথা শুনে রেগে । আমার সঙ্গে চলে বাবে বৌ ? চলে যাব- ? কোথায় ? RN V30