পাতা:পুনশ্চ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুনশ্চ
১১৩

সেই নৃত্যকলা নির্ব্বাসনের সঙ্গিনী হয়ে এসেচে
তার মর্ত্ত্যদেহে।
নৃত্যের বেদনা রাণীর বক্ষে এসে দুলে দুলে ওঠে,
নিশীথরাত্রে সমুদ্রে জোয়ার এলে
তার ঢেউ যেমন লাগে তটভূমিতে,
অশ্রুতে প্লাবিত করে দেয়।


একদিন রাত্রির তৃতীয় প্রহরের শেষে
যখন শুকতারা পূর্ব্বগগনে,
কমলিকা তার সুগন্ধী এলোচুলে রাজার দুই পা ঢেকে দিলে,
বল্‌লে, “আদেশ করো আজ ঊষার প্রথম আলোকে
তোমাকে প্রথম দেখব।”
রাজা বল্‌লে, “প্রিয়ে, না-দেখার নিবিড় মিলনকে
নষ্ট কোরো না এই মিনতি।”
মহিষী বল্‌লে, “প্রিয়-প্রসাদ থেকে
আমার দুই চক্ষু কি চিরদিন বঞ্চিত থাকবে।
অন্ধতার চেয়েও এ যে বড়ো অভিশাপ।”
অভিমানে মহিযী মুখ ফেরালে।
রাজা বল্‌লে “কাল চৈত্রসংক্রান্তি।
নাগকেশরের বনে নিভৃতে সখ্যদের সঙ্গে আমার নৃত্যের দিন।
প্রাসাদ-শিখর থেকে চেয়ে দেখো।”
মহিষীর দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়ল
বললে, “চিব কী করে।”
রাজা বল্‌লে, “যেমন খুসি কল্পনা করে নিয়ো;
সেই কল্পনাই হবে সত্য।”

১৫