পাতা:পুনশ্চ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুনশ্চ
১১৭

কিন্তু যাবে কার কাছে।
চোখে না দেখেছিল যাকে তারই কাছে তো।
কেমন করে হবে।
দেখা মানুষ আজ না-দেখা মানুষকে ছিনিয়ে নিয়ে
পাঠিয়ে দিলে সাতসমুদ্রপারে, রূপকথার দেশে।
সেখানকার পথ কোন্ দিকে?
আরো এক রাত যায়।
কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ ডুবেচে অমাবস্যার তলায়।
আঁধারের ডাক কী গভীর।
পথ-না-জানা যত সব গুহা-গহ্বর মনের মধ্যে প্রচ্ছন্ন,
এই ডাক সেখানে গিয়ে প্রতিধ্বনি জাগায়।
সেই অস্ফুট আকাশ-বাণীর সঙ্গে মিলে ঐ যে বাজে বীণায় কানাড়া।
রাজমহিষী উঠে দাঁড়িয়ে বললে, “আজ আমি যাব।
আমার চোখকে আমি আর ভয় করিনে।”
পথের শুক্‌নো পাতা পায়ে পায়ে বাজিয়ে দিয়ে
সে গেল পুরাতন অশথ গাছের তলায়।
বীণা থামল।
মহিষী থমকে দাঁড়ালো।
রাজা বল্‌লে, “ভয় কোরো না প্রিয়ে, ভয় কোরো না।”
তার গলার স্বর জলে-ভরা মেঘের দূর গুরু গুরু ধ্বনির মতো।
“আমার কিছু ভয় নেই, তোমারি জয় হোলো।”
এই বলে মহিষী আঁচলের আড়াল থেকে প্রদীপ বের করলে।
ধীরে ধীরে তুললে রাজার মুখের কাছে।
কণ্ঠ দিয়ে কথা বেরতে চায় না, পলক পড়ে না চোখে।
বলে উঠ্‌ল, “প্রভু আমার, প্রিয় আমার,
এ কী সুন্দর রূপ তোমার॥”

পৌষ ১৩৩৮