পাতা:পুনশ্চ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
পুনশ্চ

মাঝে মাঝে মরূচে-ধরা কালো মাটি
মহিষাসুরের মুণ্ডের মতো।
পৃথিবী আপনার একটি কোণের প্রাঙ্গণে
বর্ষাধারার আঘাতে রচনা করেচে
ছোট ছোট অখ্যাত খেলার পাহাড়,
বয়ে চলেচে তার তলায় তলায় নামহীন খেলার নদী।
শরৎকালে পশ্চিম আকাশে
সূর্যাস্তের ক্ষণিক সমারোহে
রঙের সঙ্গে রঙের ঠেলাঠেলি,—
তখন পৃথিবীর এই ধূসর ছেলেমানুষীর উপরে
দেখেচি সেই মহিমা
যা একদিন পড়েচে আমার চোখে
দুর্লভ দিনাবসানে
রোহিত সমুদ্রের তীরে তীরে
জনশূন্য তরুহীন পর্ব্বতের রক্তবর্ণ শিখর শ্রেণীতে,
রুণ্ঠরুদ্রের প্রলয় ভ্রূকুঞ্চনের মতো।
এই পথে ধেয়ে এসেচে কালবৈশাখীর ঝড়,
গেরুয়া পতাকা উড়িয়ে,
ঘোড়সওয়ার বর্গি সৈন্যের মতো,
কাঁপিয়ে দিয়েচে শাল সেগুনকে,
নুইয়ে দিয়েচে ঝাউয়ের মাথা,
হায় হায় রব তুলেচে বাঁশের বনে,
কলাবাগানে করেচে দুঃশাসনের দৌরাত্ম্য,
ক্রন্দিত আকাশের নীচে ঐ ধূসর বন্ধুর
কাঁকরের স্তূপগুলো দেখে মনে হয়েচে
লাল সমুদ্রে তুফান উঠল,
ছিটকে পড়চে তার শীকরবিন্দু।