পাতা:পুনশ্চ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
পুনশ্চ

ধীরে ধীরে হাওয়া দিয়েচে,
টলমল করচে পুকুরের জল,
ঝিলমিল করচে বাতাবী-লেবুর পাতা।
চেয়ে দেখি আর মনে হয়।
এ যেন আর কোনো একটা দিনের আবছায়া;
আধুনিকের বেড়ার ফাঁক দিয়ে
দূর-কালের কার একটি ছবি নিয়ে এল মনে।
স্পর্শ তার করুণ, স্নিগ্ধ তার কণ্ঠ,
মুগ্ধ সরল তার কালো চোখের দৃষ্টি।
তার সাদা সাড়ির রাঙা-চওড়া পাড়
দুটি পা ঘিরে ঢেকে পড়েচে;
সে আঙিনাতে আসন বিছিয়ে দেয়,
সে আঁচল দিয়ে ধূলো দেয় মুছিয়ে;
সে আম-কাঁঠালের ছায়ায় ছায়ায় জল তুলে আনে,
তখন দোয়েল ডাকে সজুনের ডালে,
ফিঙে ল্যাজ দুলিয়ে বেড়ায় খেজুরের ঝোপে।
যখন তার কাছে বিদায় নিয়ে চলে আসি
সে ভালো করে কিছুই বলতে পারে না;
কপাট অল্প একটু ফাঁক করে পথের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে,
চোখ ঝাপসা হয়ে আসে॥

২৫ শ্রাবণ, ১৩৩৯