পাতা:পুনশ্চ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুনশ্চ
৫৭

ছিনিমিনি খেলে ঘাটে দাঁড়িয়ে,
কঞ্চি নিয়ে করে মাছ-ধরা খেলা,
ডাঙায় গাছে উঠে পাড়ে জামরুল,
খায় যত, ছড়ায় তার বেশি।
দশ-আনীর টাক-পড়া মোটা জমিদার,—
লোকে বলে দিঘির স্বত্ব তারই,
বেলা দশটায় সে চাপ্‌ড়ে চাপ্‌ড়ে তেল মাথে বুকে পিঠে,
ঝপ্‌ করে দুটো ডুব দিয়ে নেয়,
বাঁশবনের তলা দিয়ে দুর্গা নাম করতে করতে চলে ঘরে,
সময় নেই, জরুরি মকর্দ্দমা।
দিঘিটা আছে তার দলিলে, নেই তার জগতে।
আর ছেলেটার দরকার নেই কিছুতেই,
তাই সমস্ত বন বাদাড় খাল বিল তারই,
নদীর ধার, পোড়ো জমি, ডুবো নৌকো, ভাঙা মন্দির,
তেঁতুল গাছের সবার উঁচু ডালটা।
জাম বাগানের তলায় চরে ধোবাদের গাধা,
ছেলেটা তার পিঠে চড়ে,
ছড়ি হাতে জমায় ঘোড়দৌড়।
ধোবাদের গাধাটা আছে কাজের গরজে,
ছেলেটার নেই কোনো দরকার,
তাই জন্তুটা তার চার পা নিয়ে সমস্তটা তারই,
যাই বলুন না জজ সাহেব।
বাপ মা চায় পড়ে’ শুনে’ হবে সে সদর-আলা;
সর্দ্দারপোড়ো ওকে টেনে নামায় গাধার থেকে,
হেঁচ্‌ড়ে আনে বাঁশবন দিয়ে,
হাজির করে পাঠশালায়।