পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (তৃতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१० পূর্ববঙ্গ গীতিকা মিথুন প্রেমে মাতিয়া গুঞ্জন করিতেছে। কমলদাস বাবাজির নিকট চন্দ্ৰকুমার বাবু শ্যাম রায়ের যাহা পাইলেন, তাহার সঙ্গে পূর্ব-সংগৃহীত অংশগুলি মিলাইয়া তিনি যথাসাধ্য পালাটি সম্পূর্ণ করিয়া আমাকে পাঠাইয়াছেন । কিন্তু পালাটি যে সম্পূর্ণরূপে সংগৃহীত হইয়াছে একথা নিশ্চিতরূপে বলা যায় না। মাঝে মাঝে ছাড় পড়িয়াছে বলিয়া মনে হয়। খুব অভিনিবেশপুর্বক পাঠ করিলে পালাটির বিষয় ও পরিণতি চক্ষে ধরা পড়ে। কিন্তু আমার মনে হয় যে হয় ত কবিহীদয়ে ঘটনাগুলি এতই স্পষ্টরূপে প্ৰতিবিম্বিত হইয়াছিল যে তিনি শুধু কবিত্বময় অংশগুলি রাখিয়া অপেক্ষাকৃত নীরস ঘটনার অংশ বাদ দিয়া গিয়াছেন। ‘মহুয়া’ ও ‘ধোপার পাটো যে গুঢ় নাট্যকৌশল লক্ষিত হয়, এই পালাটিতেও কতক পরিমাণে তাহাই বিদ্যমান। কবি বাছিয়া বাছিয়া এবং অনেকটা বাদ দিয়া কাহিনীটি আমাদের সম্মুখে উপস্থিত করিয়াছেন। প্ৰথমবার পড়িয়া মনে হইয়াছিল। ঘটনাগুলির পৌৰ্বাপৰ্য্য ঠিক রক্ষিত হয় নাই। এবং অনেক স্থান অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই রহিয়াছে। কিন্তু দ্বিতীয়বার পড়িয়া দেখা গেল যে, কবি তাঁহার পাঠককে সমস্যা পূরণের জন্য যথেষ্ট অবসর দিয়াছেন। একটু কল্পনাশীল হইলেই পাঠক তাহার বুদ্ধির সাহায্যে রিপুকৰ্ম্ম করিয়া পালাটিকে ঠিক দাঁড় করাইতে পারেন। “মহুয়া” এবং “ধোপার পাটো’র সঙ্গে এই পালার ভাব ও ভাষাগত অনেকটা মিল আছে। এমন কি পূর্দেশাক্ত দুই পালার ন্যায় চণ্ডীদাসের পদাবলীর সঙ্গেও এই পালাগানটির অনেক স্থলে ঐক্য দৃষ্ট হয়। আমার মনে হয় ‘যেন এই তিনটি পালা একটি বিশেষ যুগের নিদর্শন বহিয়া আনিয়াছে। /সেই যুগটি সহজিয়াতত্ত্ব-লাঞ্ছিত । এই তিন পালাতেই নায়কেরা বড় ঘরের লোক-নিম্নশ্রেণীর রমণীদের প্ৰেমে পড়িয়াছেন । এই তিন পালাতেই রমণীপ্রেমের ও তাঁহাদের ত্যাগশীলতার পরাকাষ্ঠা দেখান হইয়াছে। চণ্ডীদাস যে রামী ধোপানীকে ভালবাসিয়াছিলেন তাহা সকলেই জানেন । সহজিয়ারা ত্ৰয়োদশ ও চতুৰ্দশ শতাব্দীতে জাতিগত বৈষম্য ও শাস্ত্রোক্ত গণ্ডীগুলি ভাঙ্গিয়া চুরিয়া একাকার করিয়াছিল । তাহারা সমাজসংস্কার // কারবার জন্য জাতিভেদ উড়াইয়া দিতে চাহে নাই। তাহারা প্রেমের রাজ্যে কোন জাতিবিচার রক্ষা করে নাই। মানকেতনের পতাকার নীচে ব্ৰাহ্মণ