পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (তৃতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তোমার খুড়িমাও যাইবেন এবং এই মহৎ ব্যাপার যাহাতে সুসম্পন্ন হয় সর্বতোভাবে তাহার চেষ্টা করিব। অর্থের দরকার হইলে আমাদের রাজকোষ হইতে সরবরাহ করিব। কিন্তু এই বৃহৎ ব্যাপার কিরূপে সুসম্পন্ন করিতে হইবে। তজ্জন্য পরামর্শেব দরকার, তুমি পত্র-পাঠ চলিয়া আইসি।” পত্ৰ পড়িয়া রাজচন্দ্রের গণ্ড ও গুম্ফ উজ্জ্বল হাস্যের ছটায় প্ৰদীপ্ত হইয়া উঠিল । রঙ্গমালার দিকে চাহিয়া তিনি বলিলেন, “দেখলে রঙ্গ, আমার খুল্লতাত কিরূপ মহামনা।” রঙ্গ ঘাড় নাড়িয়া বলিল, “ইহা একটা চাতুরী মাত্ৰ, তোমাকে এখান হইতে সরাইয়া লইয়া আমাদের উপর অত্যাচার করা হইবে।” কিন্তু রাজচন্দ্র খুল্লতাতের উপর পরম বিশ্বাসে রঙ্গের কথায় কৰ্ণপাত করিলেন না । এক গ্লাস ভাঙের সরবৎ প্ৰস্তুত করাইয়া চাদভাণ্ডারী রাজচন্দ্রের ভগিণীর হাতে দিয়াছিল। রাজচন্দ্ৰ পথশ্রমে ক্লান্ত হইয়া আসিয়া সেই সরবৎ পানান্তে গাঢ় নিদ্রাভিভূত হইয়া পড়িলেন। ইতিমধ্যে চাঁদ নরেদের বাড়ীতে যাইয়া প্রথমেই রঙ্গমালার ঘরে ঢুকিল। হঠাৎ রঙ্গমালাকে দেখিয়া সে ক্ষণকাল বিস্ময়বিমূঢ় ও স্তব্ধ হইয়া দাড়াইল, এমন রূপ ত সে কোথাও দেখে নাই। কিন্তু পরমুহূত্তেই সে তাহাকে খড়গ দ্বারা কাটিতে উদ্যত হইল । রঙ্গ রাজচন্দ্রের জন্য অনেক বিলাপ করিল। মৃত্যুকালে তাহার মুখ দেখিতে পাইল না। এই বড় দুঃখ রহিল, কিন্তু যোদ্ধার কঠিন প্ৰাণ টলিল না। অবশেষে রঙ্গ মৃত্যুর পূর্ব মুহূৰ্ত্তে এ কথাও বলিয়াছিল, “আমাকে ছাড়িয়া দাও, আমি চিরজীবন তোমার দাসী হইয়া সেবা করিব।” চাদভাণ্ডারী। রঙ্গমালার কাৰ্ত্তিত মুণ্ড সঙ্গে করিয়া লইল এবং কুলির সর্দার রামা মগকে যুদ্ধে পরাস্ত ও বিনষ্ট করিয়া রঙ্গমালার ভ্ৰাতা গোলাপ নরকেও হত্যা করিল এবং নরেদের বাড়ীতে আগুন লােগাইয়। সে বাবুপুর অভিমুখে ছুটিল। রাজেন্দ্রনারায়ণ রঙ্গের ছিন্নমস্তক দেখিয়া চীৎকার করিয়া বলিলেন, “আহা এমন সুন্দরী মেয়েকে তুমি হত্যা করিয়াছ! রাজচন্দ্রের আমি কোন দোষ দেখিতে পাই না।” সেই প্রধূমিত নরগুহোঁথিত অগ্নিশিখা দেখিয়া রাজচন্দ্ৰ নিদ্রাভঙ্গের পর চমকিয়া উঠিলেন। তিনি অশ্বারোহণে দ্রুত নরেদের বাড়ীতে যাইয়া যে SDS)