পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাঞ্চনমালা
১০৩

মাথায় কাষ্ঠের বোঝা ঘাম বাইয়া পরে।
বনের ফল আন্যা আমায় খাওয়াইত আদরে॥৪০
কুলে কইরা[১] বনের পথে করিত ভরমণা[২]
এক দণ্ড না দেখলে মোরে হইত দাওনা॥[৩]৪২
তাহারে ছাড়িয়া কন্যা তোমার বাপ লইয়া আইসাছে।[৪]
আমারে ছাড়িয়া কন্যা কেমন জানি আছে॥৪৪

(১৪)

কি কইলা কি কইলা প্রভুরে আচরিত কথা।
তোমার কথা শুইন্যা মনে পাইলাম বড় ব্যথা॥
কোথা হইতে আইল কন্যা কেন থাকে বন।
অভাগী কন্যার কেউ নাই কি আপন॥
নাই কি তার বাপ মা গর্ভসুদর ভাই।
আপনা বলিতে তার কেও কিরে নাই॥
না জানি সুন্দর কন্যা দেখিতে কেমন।
আঁকিয়া দেখাও তার সুন্দর মুখ খান॥

ভাবিয়া চিন্তিয়া কুমার কোন কাম করে।
কন্যার রূপ আঁকে কুমার যোড় মন্দির ঘরে॥১০


  1. কুলে কইরা=কোলে করিয়া।
  2. ভরমণা=ভ্রমণ।
  3. দাওনা=পাগল।
  4. অতি অল্প কথায় কাঞ্চনমালার যে সকল ছোট খাট চিত্র দেওয়া হইয়াছে—তাহা বালক বয়সের অর্দ্ধ-স্মৃতি জড়িত হইয়া কুমারের বর্ণনায় বড় মধুর হইয়া উঠিয়াছে। সে বন-লক্ষী আমার বনবাস কালে জননী-কল্পা হইয়া আমাকে লালন করিয়াছিলেন। মনে হইতেছে কাঠের বোঝা মাথায় করিয়া ঘর্ম্মসিক্ত দেহে তিনি আমার জন্য বন্যফল সংগ্রহ করিয়া কত আদরে খাওয়াইতেন, কতবার বন-পথে তিনি আমাকে কোলে করিয়া ভ্রমণ করিয়াছেন এবং একদণ্ড আমাকে না দেখিলে ক্ষিপ্তের মত হইয়া যাইতেন, তাঁহার নিকট হইতে তোমার পিতা আমাকে কাড়িয়া মানিয়াছেন। না জানি আমাকে হারাইয়া তিনি যেন কেমন আছেন।