পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
৩৫

হগ্‌গল (২৯৬, ৩০০, ৩০১ পৃঃ); শুন্‌ল=হুন্‌ল, সে=হে (২৯৭ পৃঃ) সাচা=হাচা (২৯৬ পৃঃ)। সুরিতে, (ঝাঁট দিতে)=হুরতে (২৮০ পৃঃ); শুন=হুন (২৮০ পৃঃ); ‘ক’ স্থানে ‘গ’—সকল=সগল (২৭৯ পৃষ্ঠ) জোকার=জোগার (২৮১ পৃঃ); শিকার=শিগার (২৮৭ পৃঃ)। ‘হ’ স্থানে ‘অ’ যথা হইতাম=অইতাম (২৮৭ পৃঃ); হরিণ=অরিণ (২৮৮ পৃঃ); হইব=অইব (২৯১ পৃঃ); হইয়া=অইয়া (২৯১ পৃঃ); হইয়াছিল=অইয়াছিল (২৯২ পৃঃ); হইতাম=অইতাম (২৭৮), আতের=হাতের (১৭০ পৃঃ); বিভক্তিগুলি মাঝে মাঝে বিচিত্র অবয়বে দৃষ্ট হয়, যথা:—পঞ্চমীতে, কোথা হইতে “কোথা তনে” (২৮৮ পৃঃ), বাড়ীথ্যে=বাড়ীথেকে, (২৭৮ পৃঃ)। সপ্তমীতে মাটীতে স্থলে “মাটীিৎ” (২৭৯ পৃঃ) বাড়ীতে=বাড়ীৎ (২৮২ পৃঃ) গলাতে=গলাৎ (২৯০ পৃঃ) ক্রিয়া-পদেরও নানা আকার দৃষ্ট হয়; বাহুল্যভয়ে তাহা এখানে দেওয়া গেল না, পাঠক তাহার উদাহরণ পত্রে পত্রে পাইবেন।

 চাষাদের কোন কোন ঘটনা বর্ণনা করিবার একটা বিশেষ ভঙ্গী আছে, তাহা কবিত্বপূর্ণ। ভাষা স্থানে স্থানে এত ঘোরাল যে ঠিক পূর্ব্বঙ্গের লোক না হইলে সেই কবিত্বের রসাস্বাদ অন্যে করিতে পরিবেন কিনা সন্দেহ, একটি নিদর্শন দিতেছি—“এক দিন হইল কালি হাঞ্জা রাইত, আন্ধাইরে আর চান্নিতে মিইশ্যা গেছে” (২৮০ পৃঃ) কালি হাঞ্জা=সাঁঝের আঁধার একেবারে যে সূচি-ভেদ্য অন্ধকার তাহা নহে, মেঘাবৃত ক্ষীণ চন্দ্রিকা আঁধারের কোলে মিশিয়া কতকটা আলো-আঁধারের সৃষ্টি করিয়াছে। পূর্ব্ববঙ্গের লোকের মনে এই সকল কথায় যেরূপ স্পষ্ট একটা প্রাকৃতিক দৃশ্য উদিত হইবে, পদ্মার এপারে ঐ সকল কথার গ্রাম্যতা দোষের দরুণ সেরূপ স্পষ্ট ছবি মনে আসিবে না।