এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২৮
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা
মাঝে মাঝে পুষ্পের গাছ নাহি লাড়াচাড়া।
ঘরে ঘুমায় পুরুষ নারী নাই সে জানে তারা॥১৮
রাজ্যের যতেক লোক ঘুমায় এহিমতে।
পাগল অইয়া বাউলা রাজা কান্দে পথে পথে॥২০
গাছে জাগে সোণার কুইলগো পক্ষী ছাড়ে বাসা।
হেন কালেতে বাউরা রাজা হারাইল দিশা[১]॥২২
১—২২
(১০)
কোন পাহারে জ্বলে মাণিকরে এই মত তেজল[২]।
এক মাণিকে চৌদ্দভুবন করিল উজ্জ্বল॥২
কোন জনে জ্বালাইল বাতিরে এমন আন্ধাইর ঘরে।
এক ঘরে জ্বালাইলে বাতি সকল উজল করে॥৪
পূব সায়রে লাইম্যা ভানুরে ভোরের ছান করে।
ঐস্যা রথে উঠ্যা ভানু যাইবাইন[৩] নিজ পুরে॥৬
দুধের বরণ ঘোড়া গোটা আগুণবরণ পাখা।
(আরে) বাতাসের আগে ছুটে ঘোড়া নাই সে যায় দেখা॥৮
আবের বাড়ী আবের ঘর করে ঝিলিমিলি।৯
* * * * *
ঐ ঘরে যাইতে ঠাকুর উঠ্যা রইলাইন[৪] রথে।
ঊষার সঙ্গে অইব[৫] মিলন পূব পাহারের পথে[৬]॥১১
- ↑ হারাইল দিশা=দিশা হারা হইল।
- ↑ তেজল=তেজোবিশিষ্ট।
- ↑ যাইবাইন =যাইবেন।
- ↑ রইলাইন = রহিলেন।
- ↑ অইব=হইবে।
- ↑ মেরু পাহাড়ের উপর যে আলো জ্বলিয়া উঠে, এমন উজ্জল মাণিক আর কোথায় পাওয়া যাইবে। সে মাণিকের আলোতে চৌদ্দভুবন উজ্জ্বল হয়। এমন প্রদীপ কে দেখিয়াছে! এক ঘরে প্রদীপ জ্বালাইলে জগতের সমস্ত ঘর আলোকিত হয়। এই বিশ্ব-আলোকারী উজ্জ্বল মাণিক, এই চৌদ্দ ব্রহ্মাণ্ডের আঁধারনাশী প্রদীপবৎ ভানুদেব পূব সাগরে স্নান করিয়া উঠিলেন, সম্মুখে তাঁহার রথ—তাহার অশ্বগুলি তুষারশুভ্র, কিন্তু পাখাগুলি অগ্নির ন্যায় উজ্জ্বল। পূর্ব্ব সাগরে অবগাহনান্তে সূর্য্যদেব উষার সঙ্গে মিলিত হইবার জন্য পূর্ব্ব পাহাড়ের পথে এই রথে চাপিলেন। এই উষার বর্ণনায় ঋগ্বেদের উষার কথা মনে পড়িবে।