পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০০
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

দেখ্যা বুড়ী আচানক লাগ্‌ল। বুড়ী জান্‌ত যে দিন এই দেশে আইয়া[১] সতী কন্যা পাড়া[২] দিব, হেই দিন থাক্যা তার যাদু নষ্ট অইয়া যাইব। তখন বুড়ী কন্যাডারে খুব নেওরা[৩] কর্‌ত লাগ্‌ল। তখন মধুমালা কইল যে—তুমি ক্কিয়ের লাগ্যা[৪] এই সগলি[৫] রাজকুমাররারে[৬] পাঁডা বানাইয়া কষ্ট দিতাছ? তখন বুড়ী কইল, এই দেশে যে রাজকন্যা, তার একটা বর্‌ত[৭] পরতিষ্ঠা[৮] আছে। তার লাগ্যা একশ একটা পাঁডা লাগব। এই একশ একডা পাঁডা যে যোগাড় কইরা দিতে পারব, তারে রাজা খুব ভালা দেখ্যা একটা পুরস্কার দিব। তখন মধুমালা কইল—এই যে পাঁডা বানানির[৯] যাদুড়া, এইডা যদি আমারে হিকাইয়া[১০] দেও, তা অইলে তোমার ছাল্যা[১১]র লগে রাজকন্যার বিয়া দিয়া দিয়াম। তখন বুড়ী আয়নার পাড়ের[১২] মধ্যে যে মায়া ফুলের গাছ আছে;—হেই গাছের কথা মধুমালারে কইল। এই কথা হুন্যা মধুমালা একদিন পাড়ে গিয়া ফুল তুল্যা আন্যা মালা গাঁথল। এই মালা লইয়া মধুমালা করল কি—একটা সন্ন্যাসীর বেশ ধইরা রাজদরবারে গেল। সিঙ্গাসনের[১৩] উপরে পাড়ের মত যে দানবরাজা বইয়া আছিল, তার গলায় হেই মালাডা দিল। দেওন মাত্রই হেই রাজা পাঁডা অইয়া দৌড় মারল। তখন রাজ্যের যত পাত্র মিত্র আছিল, সগলেই ডরাইয়া পলাইয়া গেল। আগে একটা কথা কইতে ভুল্যা গেছলাম। হেই যে মায়া ফুলের পাতা, হেই পাতা খাওয়াইলে, ফির‍্যাবার[১৪] পাঁডা গুলাইন মানুষ অইয়া যায়। তখন মধুমালা কর্‌ল কি—যত পাঁডা আছিল, মায়াফুলের পাতা খাওয়াইয়া মানুষ কর্‌ল। এই মাইনষের[১৫]


  1. আইয়া=আসিয়া।
  2. পাড়া=পদক্ষেপ।
  3. নেওরা=অনুরোধ; কাকুতি মিনতি।
  4. কিয়ের লাগ্যা=কিসের জন্য।
  5. সগলি=সকল।
  6. রাজকুমাররারে=রাজকুমারদিগকে।
  7. বর্‌ত=ব্রত।
  8. পর্‌তিষ্ঠা=প্রতিষ্ঠা।
  9. বানানির=তৈয়ার করার।
  10. হিকাইয়া=শিখাইয়া।
  11. ছাল্যা=ছেলে!
  12. পাড়ের=পাহাড়ের।
  13. সিঙ্গাসন=সিংহাসন।
  14. ফির‍্যাবার=(ফিরিয়া আবার) আবার।
  15. মাইন্‌ষের=মানুষের। ‘মানুষ’ কে ‘মাইনষে’ বলা কেবল পূর্ব্ববঙ্গে নহে, উত্তর বঙ্গেও প্রচলিত আছে। “নাইয়া উঠ্‌ছিস মাইন্‌সের রক্তে”। ৺রজনী সেন।