পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সুরৎ জামাল ও অধুয়া
৪০৯

যেখানে থাকিত জামাল মায়ের সহিতে।
মাটি চাপা দিছে লেংরা তার উপরেতে॥৬০
চল্লিশপুড়া জমি লেংরা নাখেরাজ পাইয়া।
হাইলা বনে থাকে লেংরা পুতি নাতি লইয়া॥

এই দেখ্যা জামাল খাঁ দেওয়ান মেলা যে করিল।
বান্ন্যাচঙ্গ মুল্লুকে গিয়া দাখিল হইল॥৬৪
উজার মুল্লুক দেখে যত প্রজাগণ।
হাহাকারে কান্দে সবে বড় দুক্ষু মন[১]

দুষমন্‌ দুলাল খাঁ দেখ কোন্ কাম করে।
পরজারে আনিয়া যত বে-ইজ্জত করে॥৬৮
খিরাজের লাগ্যা কার কার কাটে বা গর্দ্দান।
তাওয়াই[২] হইল রাজ্যি না পায় আছান॥
শিঙ্গের পাগাড়ে[৩] লোকে রাখে বাছাইয়া।
মরিচের ধুমা দেয় দাঁড়িতে বান্ধিয়া॥৭২
আওরাত জননী সবে বে-ইজ্জত করে
দুষ্কু পাইয়া দেশের লোক বাড়ী ঘর ছাড়ে।৭৪

এই সব দেখিয়া জামাল কি কাম করিল
আসিয়া মায়ের আগে বার্ত্তা জানাইল।
ষোল বচ্ছর কালে জামাল কোন্ কাম করে
ফৌজ লইয়া গেল লড়াই শিখিবারে॥


  1. মন—(মনে) কর্ত্তায় অধিকরণ।
  2. তাওয়াই=ধ্বংস; বিনাশ।
  3. শিঙ্গের গাগাড়ে=যে রূপে শিং মাছ রাখা হয়। পূর্ব্বকালে অত্যাচারী ভূম্যধিকারীরা অপরাধী প্রজাগণকে ধরাইয়া আনিয়া শিংমাছের কূপে ছাড়িয়া দিত এবং মনস্কামনা সিদ্ধ না হওয়া পর্য্যন্ত এইরূপ নিষ্ঠুর ভাবে তাহাদিগের উপর অত্যাচার করা হইত। পোড়া লঙ্কার ভাণ্ড দাঁড়িতে বান্ধিয়া, তাহার যন্ত্রণাদায়ক তীব্র গন্ধে হতভাগ্যদিগকে জর্জ্জরিত করার রীতিও জমিদারগণের একটা প্রাচীন দণ্ডবিধি।