পাতা:পূর্ব-বাংলার গল্প - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮
পূর্ব-বাংলার গল্প

ভয়ে আনতে সাহস হয় না।”

 ভগ্নী কহিল, “ভয়ংকর লোকটাই বটে। ছেলেমানুষ হঠাৎ দেখলে আচমকা আঁৎকে উঠতে পারে।”

 এইভাবে হাস্যপরিহাস চলিতে লাগিল, কিন্তু অপূর্ব অত্যন্ত বিমর্ষ হইয়া রহিল। কোনো কথা তাহার ভালো লাগিতেছিল না। তাহার মনে হইতেছিল, সেই যখন মা কলিকাতায় আসিলেন তখন মৃন্ময়ী ইচ্ছা করিলে অনায়াসে তাঁহার সহিত আসিতে পারিত। বোধ হয়, মা তাহাকে সঙ্গে আনিবার চেষ্টাও করিয়াছিলেন, কিন্তু সে সম্মত হয় নাই। এ সম্বন্ধে সংকোচবশত মাকে কোনো প্রশ্ন করিতে পারিল না— সমস্ত মানবজীবন এবং বিশ্বরচনাটা আগাগোড়া ভ্রান্তিসংকুল বলিয়া বোধ হইল।

 আহারান্তে প্রবলবেগে বাতাস উঠিয়া বিষম বৃষ্টি আরম্ভ হইল।

 ভগ্নী কহিল, “দাদা, আজ আমাদের এখানেই থেকে যাও।”

 দাদা কহিল, “না, বাড়ি যেতে হবে; কাজ আছে।”

 ভগ্নীপতি কহিল, “রাত্রে তোমার আবার এত কাজ কিসের। এখানে এক রাত্রি থেকে গেলে তোমার তো কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না, তোমার ভাবনা কী।”

 অনেক পীড়াপীড়ির পর বিস্তর অনিচ্ছা সত্ত্বে অপূর্ব সে রাত্রি থাকিয়া যাইতে সম্মত হইল।

 ভগ্নী কহিল, “দাদা, তোমাকে শ্রান্ত দেখাচ্ছে, তুমি আর দেরি কোরো না, চলো, শুতে চলো।”

 অপূর্বরও সেই ইচ্ছা। শয্যাতলে অন্ধকারের মধ্যে একলা হইতে পারিলে বাঁচে, কথার উত্তর-প্রত্যুত্তর করিতে ভালো লাগিতেছে না।

 শয়নগৃহের দ্বারে আসিয়া দেখিল ঘর অন্ধকার। ভগ্নী কহিল, “বাতাসে আলো নিবে গেছে দেখছি। তা, আলো এনে দেব কি, দাদা।”

 অপুর্ব কহিল, “না, দরকার নেই, আমি রাত্রে আলো রাখি নে।”