পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৬৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪৬ ভারতবর্ষ। রত্নাবলীতে তাঙ্গরই বিকাশ দেখি । সেই রাজা, সেই পরিচারিক, সেই প্রেম-সঞ্চায়,-সেই সকলই আছে । পড়িলেই সহসা মনে হয়, যেন রত্নাবলীতে কালিদাসের নাটকাবলীর ছায়াপাত ঘটিয়াছে। অথচ, কয়েকটি বিশেষ গুণে, নাট্যকারের কতকগুলি কলা-কুশলতায়, ‘রত্নাবলী যেন অধিকতর মনোহারিণী হইয়াছে। -- প্রথমে রত্নাবলীর বর্ণনীয় বিষয় বলিতেছি । কৌশাম্বীর অধিপতি—উদয়ন বা বৎসরাজ। তাহার মহিষীর নাম—বাসবদত্ত । রাজ ও রাজমহিষী বসন্তোৎসবে উন্মত্ত আছেন, সেই উৎসবে রাজ্ঞীর পরিচারিক সাগরিকাও উপস্থিত হন। রাজমহিষী যখন পতির পূজায় ব্রতী ছিলেন ; সাগরিক পুষ্পচয়ন করিতে করিতে রাজার প্রতি লক্ষ্য করেন । সাগরিকার মনে হয়,—সে রূপের তুলনা নাই। uসাগরিক পিত্রালয়ে কামদেবের চিত্র দেখিয়াছিলেন। র্তাহার মনে হইল,—এই জীবন্ত চিত্রের নিকট সে চিত্র তুচ্ছ । সাগরিক অন্তরালে দাড়াইয়া একদৃষ্টে রাজার রূপ-মুধা পান করিতে লাগিলেন – র্তাহার প্রতি প্রাণমন সমর্পণ করিয়া বসিলেন । তখন কত পুরাতন স্মৃতিই তাহার মনোমধ্যে জাগিয়া উঠিল। তিনি যে সিংহল-রাজকন্যা, তাহার পিতা সিংহলাধিপতি তাহাকে যে বৎসরাজের সহিত বিবাহের জন্য কৌশাম্বীতে প্রেরণ করিয়াছিলেন, আর সিংহল হইতে কৌশাম্বী আসিবার পথে পোতমগ্নে তাহার যে ভাগ্যবিপৰ্য্যয় ঘটে এবং ঘটনাচক্রে পরিচারিকারূপে রাজগুছে আশয় লইতে হয়,—এই সকল কথা তাঙ্গর অন্তরে তখন জাগরুক হইল। উৎসব ভঙ্গ হইলে, সকলে চলিয়া গেলে, সাগরিক যে রাজা উদয়নকে আর অধিকক্ষণ দেখিতে পাইলেন না, তাহাতেই তাহার মন অস্থির হইয়া উঠিল । ইহার পল সাগরিক উদ্যানে প্রবেশ করিয়া রাজা উদয়নের একখানি প্রতিকৃতি অঙ্কিত করেন । সাগরিকার সর্থী সুসঙ্গত সহসা সেই উষ্ঠানে প্রবেশ করিয়া, সাগরিকার হস্তে সেই চিত্র দেখিতে পায়। সাগরিক সেই চিত্র লইয়া, চিত্রের প্রতি চাহিয়া কখনও দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিতেছিলেন, কখনও বা চিত্রের প্রতি একদৃষ্টে চাচিয়া চাহিয়া অশ্রুজলে বক্ষঃস্থল ভাসাইতেছিলেন। মুসঙ্গতা সেই চিত্র দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিল,—“মহারাজের এ চিত্র কে আকিল,—সাগরিক ?’ সাগরিক অশ্রুসম্বরণ করিয়া উত্তর দিলেন,—‘সে দিন কামদেবের উৎসব হইতেছিল ; তাই দেখিয়া আমি কামদেবের এই প্রতিমূৰ্ত্তি অঙ্কিত করিয়াছি । মুসঙ্গত ঈষৎ হাসিয়া কছিল,—“ভাল, আমিও তবে কামদেবের সঠিত রতির মিলন করিয়া দেই ।” এই বলিয়া চিত্রপটখানি গ্রহণ করিয়৷ উদয়নের সেই প্রতিকৃতির পাশ্বে স্বসঙ্গত সাগরিকার মূৰ্ত্তি আঁকিয় দিল । সে অঙ্কনে সত্য সত্যই যেন রতি-মদনের মিলন হইল। এই সময় রাজার অশ্বশালা হইতে একটা প্লবঙ্গম কনক-শৃঙ্খল ছিন্ন করিয়া উদ্যান অভিমুখে পলায়নপর হয়। রাজ-অনুচরগণ তাহার পশ্চাদমুসরণ করে । সেই সময়ে সন্ত্রস্ত হইয়া ব্যস্তসমস্তে সাগরিক ও সুসঙ্গত তমাল-শাখার অন্ধকারে লুক্কায়িত হন। উষ্ঠানে রাজ্ঞীর একটি শারিক ছিল । বানর সেই সারিকার পিঙ্করদ্বার উন্মুক্ত করিয়া দেয়। শারিক উড়িয়া পলায়ন করে। শারিক যে কথা শুনিত, তাছাই বলিতে পারিত। সুতরাং সাগরিকার ও র্তাহার সহচরীর বিষম আশঙ্কা হয় । রাজার সম্বন্ধে সাগরিকার কথোপকথনের বিষয় শারিকা পাছে রাজ্ঞীর কাছে প্রকাশ করে,--ইঙ্গই আশঙ্কার প্রধান কারণ। এই সকল কারণে চিত্ত" উদ্বিগ্ন হওয়ায়, অপিচ