পাতা:পৌরাণিকী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌরাণিকী দেবতারা কেহ ভঁাহাকে আশ্রয় দিতে সাহসী হইলেন না । তখন পাগলবেশে ধূর্জটি আসিয়া পরম করুণায় গঙ্গাদেবীকে মাথায় করিয়া লাইলেন । সুর-জগৎ বিস্মিত হইয়া গেল । “হে নীলকণ্ঠ । তুমি সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ এই তিন গুণই অতিক্রম করিয়াছ। যাহা শুদ্ধ, যাহা জগতের কল্যাণকর, তাহা তুমি পরিহার করিয়াছ, যাহা ঘূণিত, অশুচি ও অকল্যাণহেতু বলিয়া পরিত্যক্ত, সেই ভস্ম ও চিতাগ্নি-তোমার আদৃত। চন্দন, অগুরু প্রভৃতি তুমি চাহ না, শ্মশানের শব-কঙ্কাল ও চিতাভস্মই তোমার প্ৰিয় । তোমার ধনরক্ষক কুবের, কিন্তু সে ধনরত্বের প্রতি তোমার দৃষ্টিপাত নাই। যুগে যুগে তুমি একবারও কুবেরকে স্মরণ করা নাই। অন্য দেবতাদের ভুষণ-বাহনের ঘটায় স্বৰ্গপুরী উজ্জ্বল, তোমার অনুচর ভুত, প্ৰেত, অসভ্য নদী, ভৃঙ্গী যাহাঁদের স্পর্শ অপর দেবতারা ঘূণায় পরিত্যাগ করেন, তুমি নিম্বর্ণতাহারাই তোমার প্রিয়সখা , তাথৈ তাথৈ রবে তাহারা তোমার সঙ্গে মৃত্য করিয়া বেড়ায়। অপর দেবতাদের কণ্ঠে পারিজাত-হার, তোমার কৰ্ণে বিষাক্ত ধূস্তুর-পুষ্প । জগৎ নাশেও তোমার আনন্দ নষ্ট হয় না ; যখন জগৎ ধ্বংস পায়, তখন তোমার মুখে প্ৰলয়-বিষাণ বাজিতে থাকে এবং তোমার মুখে পবিত্র ‘ওঙ্কার’ উচ্চারিত হয় । তুমি চির-প্ৰশান্ত, কামনা তোমার কোপদৃষ্টিতে ভস্ম হইয়া গিয়াছে। প্ৰফুল্ল-পঙ্কজ-সদৃশ পাশিযুগল অঙ্কেতে স্থাপিত করিয়া অন্তশ্চর মরুৎ নিরোধপূর্বক যখন তুমি সমাধি-সাগরে নিমগ্ন হও, তখন কত যুগ তোমার উপর দিয়া চলিয়া যায় ; তখন কত ইন্দ্ৰ, কত ব্ৰহ্মার উৎপত্তি ও বিলয় হয় । হে অনাদিদেব ! তুমি একমাত্র ধ্রুব-সত্যের ন্যায় সমাধিতে বিরাজ করিতে থাক । مارچ