পাতা:প্রজাপতির নির্বন্ধ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রজাপতির নির্ব্বন্ধ
৩৯

এবং অমন ভ্রূকুটি করে আমাকেও ভয় দেখাবেন না—আমি অভূতপূর্ব্ব নই—এমন কি, আমি আপনাদেরই ভূতপূর্ব্ব—আমার নাম—

 চন্দ্রমাধব বাবু তাড়াতাড়ি উঠিয়া কহিলেন আর নাম বলতে হবে না— আসুন্ আসুন্ অক্ষয় বাবু—

 তিন তরুণ সভ্য অক্ষয়কে নমস্কার করিল। বিপিন ও শ্রীশ দুই বন্ধু সদ্যোবিবাদের বিমর্ষতায় গম্ভীর হইয়া বসিয়া রহিল; পূর্ণ কহিল, মশায়, অভূতপূর্ব্বর চেয়ে ভূতপূর্ব্বকেই বেশী ভয় হয়!

 অক্ষয় কহিলেন—পূর্ণ বাবু বুদ্ধিমানের মত কথাই বলেছেন। সংসারে ভূতের ভয়টাই প্রচলিত। নিজে যে ব্যক্তি ভূত অন্যলোকের জীবনসম্ভোগটা তার কাছে বাঞ্ছনীয় হতে পারেই না, এই মনে করে মানুষ ভূতকে ভয়ঙ্কর কল্পনা করে। অতএব সভাপতিমশায়, চিরকুমার সভার ভূতটিকে সভাথেকে ঝাড়াবেন, না পূর্ব্ব সম্পর্কের মমতা বশতঃ একখানি চৌকি দেবেন, এইবেলা বলুন!

 “চৌকি দেওয়াই স্থির” বলিয়া চন্দ্রবাবু একখানি চেয়ার অগ্রসর করিয়া দিলেন। “সর্ব্ব সম্মতিক্রমে আসন গ্রহণ করলুম” বলিয়া অক্ষয়বাবু বসিলেন; বলিলেন আপনারা আমাকে নিতান্ত ভদ্রতা করে বস্‌তে বল্লেন বলেই যে আমি অভদ্রতা করে বসেই থাক্‌ব আমাকে এমন অসভ্য মনে করবেন না—বিশেষতঃ পান তামাক এবং পত্নী আপনাদের সভার নিয়মবিরুদ্ধ অথচ ঐ তিনটে বদ্‌ অভ্যাসই আমাকে একেবারে মাটি করেছে সুতরাং চট্‌পট্‌ কাজের কথা সেরেই বাড়িমুখো হতে হবে।

 চন্দ্রবাবু হাসিয়া কহিলেন, আপনি যখন সভ্য নন্‌ তখন আপনার সম্বন্ধে সভার নিয়ম নাই খাটালেম— পান তামাকের বন্দোবস্ত বোধ হয় করে দিতে পারব কিন্তু আপনার তৃতীয় নেশাই—

 অক্ষয়। সেটি এখানে বহন করে আনবার চেষ্টা কর্‌বেন না, আমার সে নেশাটি প্রকাশ্য নয়!