পাতা:প্রতিবিম্ব - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কথা সে শেষ করার সুযোগ পেল না, তাৱক এসে বাধা দিল। বাধাও কি সহজ বাধা, ঘাড় ধরে সীতানাথকে টেনে তুলে প্ৰচণ্ড আক্ৰোশে। সে বসিয়ে দিল কয়েকটা কিল চড় ঘুসি, তীব্ৰ চাপা গলায় বলতে লাগল, “পাজী! বদমাস। লক্ষ্মীছাড়া ।” এ কোনো পুরানো পীরিতির জের টানা নয়, এ শুধু বােদরটার বঁাদারামি টের পেয়ে মাথায় বীরত্বের আগুন জলে উঠেছিল তারকের । আটকানো নিশ্বাসটা তার পড়বার সুযোগ পেয়েছিল। সীতানাথের গলা ধরে সে ঝাকি মারছে, মনোজিনী ব্যাকুলভাবে দু’জনকে ঠেলে তফাৎ করবার চেষ্টা করে বলল, “কে ? কি করছেন। আপনি ? “আমি তারক । বােদরটাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসছি। দাঁড়ান।” “ছেড়ে দিন। ওকে আপনি !” মনোজিনীর কথার সুরে থতামত খেয়ে তারক সীতানাথকে ছেড়ে দিল। কিছুক্ষণ স্তন্ধ হয়ে রইল। ঘর-নিঝুম, নিঃশব্দ। ঘরে যারা ঘুমোচ্ছিল তারা সবাই ঘুমিয়েই চলেছে, একজনও সাড়া দেয় না, শব্দ করে না। তারকের মনে হল সে যেন রূপকথার ঘুমন্ত পরীর একটি ঘরে এসে দাঁড়িয়েছে, যাদুমন্ত্রে ঘুম পাড়ানো হয়েছে সারি সারি নরনারীকে, কোন ঘটনা কোন হট্টগোলেই তাদের ঘুম ভাঙ্গবে না। “শোবে যাও সীতু। তারকবাবুকে বুঝিয়ে বলছি, উনি কিছু প্ৰকাশ করবেন না। ব্যাপারটা তুমি আমি আর তারকাবাবুর মধ্যেই রইল। কেউ কিছু জানবে না।” বলে একটু থেমে যোগ দিল, “কাল সারাদিন ঘুরতে হবে-একটু ঘুমিয়ে নাও।” সীতানাথ নীরবে খাটে উঠে শুয়ে পড়ল । * 魏