পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিভাষণ উত্তরবঙ্গ সাহিত্যািসন্মিলনে পঠিত আজ বাইশ বৎসর পতবে এই রাজশাহি শহরে আমি সব জনসমক্ষে সসংকোচে দটি-চারিটি কথা বলি। আমার জীবনে সেই সব প্রথম বক্ততা। কোনো দরভবিষ্যতে আমি যে এই সভার মািখপাত্রস্বরপে আবার আপনাদের সম্মখে উপস্থিত হইব, সেদিন এ কথা আমার স্বপ্নেরও অগোচর ছিল। আজিকার ব্যাপারে যাঁহারা কমকতা সেদিনও তাঁহারাই কম কিতা ছিলেন। মহারাজ নাটোর এবং শ্রীযক্ত অক্ষয়কুমার মৈত্ৰেয় মহাশয়ের উদযোগেই সে সভা আহত হয়। এবং তাঁহাদের অন্যুরোধেই আমি সে সভার প্রধান বক্তা শ্রীযন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পদানােসরণ করি। এ সভারও পতির আসন রবীন্দ্রনাথের জন্যই রচিত হইয়াছিল; তাঁহার অন্যােপস্থিতিতে পাবোেন্ত বন্ধদ্বয়ের অন্যুরোধে এবং স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের অভিপ্ৰায়মত আমি তাঁহার ত্যন্ত এই রিস্তু আসন গ্ৰহণ করিতে বাধ্য হইয়াছি। যাঁহারা আমাকে প্রথমে আসরে নামান, তাঁহারাই আজি আমাকে এ আসরের প্রধান নায়ক সাজাইয়া খাড়া করিয়াছেন। এ পদ অধিকার করিবার আমার কোনোরাপ যোগ্যতা আছে কি না, সে বিচার তাঁহারাও করেন নাই, আমাকেও করিতে দেন নাই। এ আসন গ্রহণ করিবার অধিকার যে আমার নাই, তাহা আমার নিকট অবিদিত নয়। আমি অবসরমত সাহিত্যচৰ্চা করি, কিন্তু সে গািহকোণে এবং নিজানে। বক্তা ও লেখক একজাতীয় জীব নন; ইহাদের পরস্পরের প্রকৃতিও ভিন্ন, রীতিও ভিন্ন। বক্তা চাহেন, তিনি শ্রোতার মন জবরদখল করেন; অপর পক্ষে লেখক পাঠকের মনের ভিতর অলক্ষিতে এবং ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে চাহেন। বক্তা শ্রোতার মনকে বিশ্রাম দেন না; লেখক পাঠকের অবসরের সাথি। অক্ষরের নীরব ভাষায় একটি অদশ্য শ্রোতার কানে কানে আমরা নানা ছলে নানা কথা বলিতে পারি; কিন্তু জনসমাজে আমাদের সহজেই বাক-রোধ হয়। যে বাণী সবজি পত্রের আবডালে প্রস্ফটিত হইয়া উঠে তাহা সহযোির নগিন কিরণের সপশে মিীয়মাণ হইয়া পড়ে। অথচ গণেীসমাজে সপরিচিত হইবার লোভও আমাদের পরামাত্রায় আছে। সাহিত্যের রঙ্গভূমিতে দশকের নয়ন-মন আকর্ষণ করিবার জন্য আমরা নিত্য লালায়িত, অথচ লেখকের ভাগ্যে পাঠকের সাক্ষাৎকার লাভ কচিৎ ঘটে। প্রশংসার পািপবাল্টি এবং নিন্দার শিলাবটি উভয়ই আমাদের শিরোধান্য, একমাত্র উপেক্ষাই আমাদের নিকট চির অসহ্য। সতরাং সাহিত্য-সমাজে যথাযোগ্য আসন লাভ করাতেই আমরা কৃতাৰ্থতা লাভ করি। দন্ডী বলিয়াছেন যে