পাতা:প্রবন্ধ সংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

G8 প্ৰবন্ধসংগ্ৰহ মাতৃভাষা যে অদ্যাপি যথাযোগ্য স্থান লাভ করেন নাই, ঐ বিমাতৃভাষায় উৎকীর্ণ শিলালিপিই তাহার পরিচয়। এবং উক্ত লিপি ইহাও প্রমাণ করিতেছে যে, ভাষাসম্বন্ধেও আত্মবিশ হওয়াই সখের এবং পরবশ হওয়াই দঃখের কারণ। সত্য কথা এই যে, মাতৃভাষার সাহায্যেই আমরা যথাৰ্থ ভাষাজ্ঞান লাভ করি এবং সে জ্ঞানের অভাবে আমরা পরিভাষাও যথার্থ রাপে আয়ত্ত করিতে পারি না। যেদিন আমাদের সকল বিদ্যালয়ে মাতৃভাষা প্রাধান্য লাভ করবে এবং ইংরাজি ভাষা দ্বিতীয আসন গ্রহণ করিতে বাধ্য হইবে সেইদিন বঙ্গসন্তান যথাৰ্থ শিক্ষালাভের অধিকারী হইবে। একদিন যেমন বাংলা পড়িতে বলিলে অনেকে মনে প্ৰমাদ গনিতেন, আজ তেমনি বাংলা লিখিতে বলিলে অনেকে মনে প্ৰমাদ গনেন। সেকালে আমাদের বিরদ্ধে অভিযোগ ছিল এই যে, আমরা নবাঁশিক্ষার আভিজাত্য নষ্ট করিতে উদ্যত হইয়াছি ; একালে আমাদের বিরদ্ধে অভিযোগ এই যে, আমরা নবসাহিত্যের আভিজাত্য নন্ট করিতে উদ্যত হইয়াছি। আমাদের জাতীয় ভাষা যে এত হেয় যে, তাহার সােপশোঁ আমাদের শিক্ষাদীক্ষা সব মলিন হইয়া যায়, এ কথা বলায় বাঙালি অবশ্য তাঁহার আভিজাত্যের পরিচয় দেন না, পরিচয় দেন শােধ তাঁহার বিজাতীয় নবশিক্ষার। যে কারণেই হউক, অনেকে যে মাতৃভাষার পক্ষপাতী নহেন তাহার প্রকৃভট প্রমাণ আমি এই উপলক্ষেই পাইয়াছি। যেদিন আমি এই সভার সভাপতি নির্বাচিত হই সেদিন আমার কোনো শাভার্থী বন্ধ আমাকে সতক কারিয়া দেন যে, এ সভাসস্থলে 'বীরবলী ঢঙ চলবে না’। যে-কোনো সভাতেই - হউক-না কেন, বিদষকের আসন যে, সভাপতির আসনের বহা নিম্পেন সে জ্ঞান যে আমার আছে। তাহা অবশ্য আমার বন্ধর অবিদিত ছিল না। অপর পক্ষে আমার উপর তাঁহাব এ ভরসাটকুও ছিল যে, এই সংযোগে আমি এই উচ্চ আসন হইতে সভার গাৱে, বীরবিলিক অ্যাসিড নিক্ষেপ করিব না। আসলে তিনি এ ক্ষেত্রে আমাকে বীরবলের ভাষা ত্যাগ করিতেই পরামর্শ দিয়াছিলেন, কেননা সে ভাষা আটপহীরে, পোশাকি নয়। সভ্যসমাজে উপস্থিত হইতে হইলে সমাজসম্পমাত ভদ্রবেশ ধারণ করাই সংগীত, ব্যক্তিবিশেষের পক্ষে সে বেশ যতই অনভ্যস্ত হউক-না কেন। আমি তাঁহার পরামর্শ অনসারে ‘পররাচি পরিন’ – এই বাক্য শিরোধাম করিয়া এ যাত্রা সাধভাষাই অংগীকার করিয়াছি। কেননা সাধাভাযা যে ধোপদােরস্ত সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। ইহাতে একটও রঙ নাই এবং অনেকখানি মাড় আছে, ফলে ইহা সাবতই ফলিয়াও উঠে এবং খড়খড়ও করে। আশা করি, এ সন্দেহ কেহ। করবেন না যে, এই বেশ পরিবতনের সঙ্গে সঙ্গে আমার মতেরও পরিবতন ঘটিয়াছে। সময়োচিত বেশ ধারণ করা আমাদের সমাজের সনাতন প্রথা। আমরা কৈশোরের প্রারম্ভে অন্তত তিনদিনের জন্যও কণে সবর্ণকুন্ডল এবং দেহে গৈরিক বসন ধারণ করিয়া মন্ডিতমস্তকে ঝলি-স্কন্ধে দশডহস্তে নগনপদে ভিক্ষা মাগি। এই আমাদের প্রথম সংস্কার। তাহার পর যৌবনের প্রারম্ভে অন্তত একদিনের জন্যও আমরা রাজবেশ ধারণা করিয়া তকত-রাঙায় চড়িয়া ঢাকঢোল বাজাইয়া পাত্রমিত্ৰসমভিব্যাহারে কনে নামক একটি অবলা প্রাণীর গহাভিমখে রণযাত্রা করি। ইহাই