পাতা:প্রবাসী কার্তিক ১৩৪৪ সংখ্যা ৭.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

क डीिन শিশুকন্যা ও একটি ঝি । বীরেশ্বর ○ー。 ষ্টেশনের প্ল্যাটফৰ্ম্মের উপর কয়েকটা জেলে ছুটাছুটি করিতেছে বড় বড় সদ্যধর ইলিশ মাছ লইয়। সদাসৰ্বদ এসব মাছ পাওয়া যায় না। মামীম। দেখিলে অত্যন্ত খুশী হইবেন, চিনি, টিনিও খুশী হইবে মনে করিয়া মৃণাল আট আনা পয়সা খরচ করিয়া একটা মাঝারি-গোছের মাছ কিনিয়া লইল । তাহার হাতে পয়সা কড়ি বিশেষ থাকে না, ন হইলে দুইটা লইতে পারিত। আবার ট্রেন ছুটিয়া চলে। খানিক বাদে প্রকাণ্ড এক জংশন, এখানে গাড়ী প্রায় অrধ ঘণ্ট। দাড়াইয়া থাকে। উৎকলবাসিনী দুটি এইখানে নামিয় গেল, তাহদের স্থানে আসিয়া বসিল একটি বাঙালী বধু। সঙ্গে তাহার একটি তরুণীটি কোন ও কারণে অতিশয় চটq আছে । সঙ্গের লোকদের এবং শিশুকন্যাকে ও মাঝে মাঝে তাহার মেজাজের ঝাজ সহ করিতে হইতেছে। দেখিয়া শুনিয়া মৃণাল আর তাহার সঙ্গে ভাব করিবার কোনও চেষ্টা করিল না । গাড়ী ক্রমে মেদিনীপুর ছাড়াইয়া গেল। এইবার রাঢ়ের রাঙা মাটি আর রুক্ষ কঠিন পাৰ্ব্বত্য শ্ৰী চোখে পড়িতে আর হু করে । ঝোপঝাপ কমিয়া আসিতেছে, তাহার স্থান পাড়াগায়ে । অধিকার করিতেছে শালবন । পাহাড়ের অস্পষ্ট আভাস দিগন্তের কোলে ফুটা উঠতেছে। মৃণালকে যেন উহ হাতছানি দিয়া ডাকিতেছে, আগ বাড়াইয়া লইবার জন্য যেন ক্রমে ক্রমে অগ্রসর হইয়া আসিতেছে। এখান হইতে মৃণাল খালি মিনিট গুনিতে আরম্ভ করে । আর চার-পাচটা ষ্টেশন, তাহার পরেই মামার বাড়ীর গ্রাম। ঘর বলিতে আজ পর্যন্ত মৃণাল এই গ্রামটিকেই জানিয়াছে, বাপের বাড়ীর দেশের সঙ্গে তাহার মনের কোনও সম্পর্কই নাই, চোখেও সে উহা একবার মাত্র দেখিয়াছে। স্বৰ্য্য মাঝ আকাশ ছাড়িয়া ক্রমে পশ্চিমে হেলিয়া পড়িতেছে। খোলা জানালার পথে এক ঝলক রোদ আসিয়া মৃণালের মাথার উপর ছড়াইয়া পড়িল। সে একটু সরিয়া বসিল । মাঝের ষ্টেশনগুলা একটা একটা করিয়া পার হইয়া গেল । ইহার পরেই তাহাকে নামিতে হইবে। সে চুল ঠিক করিয়া, পায়ে জুতা দিয়া প্রস্তুত হইয়া বসিল । কয়েক মিনিট পরেই গাড়ী ষ্টেশনে আসিয়া থামিয় গেল । মামারাবু তাহাকে লইতে আসিয়াছেন । বীরেশ্বর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেদিন আমাদের বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠানের দিন ছিল । আমরা তারই জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। মৃত্যু যে গোপনে উৎসবের আলিঙ্গন থেকে উৎসবের কোলের একটি ছেলেকে কেড়ে নিতে এসেছিল সে সংবাদ আমার জানা ছিল না। আমাদের আশ্রম তারই অনুসরণে পাঠিয়ে দিলে আপন অনারব্ধ উৎসবকে তার জীবনাস্তের শেষ ছায়ার মতো। সেদিন আমাদের বর্ষপঞ্জীর উৎসব-গণনায় একটি শূন্ত চিহ্ন দুয়ে গেল ঘেখানে ছিল বীরেশ্বরের আবাল্যকালের আসন । প্রীনিকেতনের তুলস্কর্ষণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাবার মুথে কে একজন বললে গোসাইজির ঘরে দুশ্চিন্তাজনক রোগ দেখা দিয়েছে, ব্যস্ততার মুখে কথাটা ভালো ক’রে আমার কানে Ե পৌছয় নি। আমি মুহূতের জন্যেও ভাবতে পারি নি যে বীরেশ্বরই তার লক্ষ্য । * সে ছিল মুক্তিমান প্রাণের প্রতীক, যৌবনের তেজে দীপ্ত। তাকে ভালোবেসেছে আশ্রমের সকলেই, সে ভালোবেসেছে আশ্রমকে। তার সত্তার মধ্যে এমন একটি উদ্যমের পূর্ণতা ছিল যে তাকে হারাবার কথা কল্পনাও করতে পারি নি। অবশেষে দারুণ সংবাদ নিশ্চিত হয়ে কানে পৌছলতার পর থেকে কত অধরাত্রে ঘুমের ফাকে কত ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে, কতবার দিনের বেলায় কাজের মাঝে মাঝে তার ছবি মনে অকস্মাৎ ছায়া ফেলে গেল ।