তুমি মৃত্যুর শাশ্বত মহাদান । শ্রীঅশোক চৌধুরী ওগো সাড়া দাও, বারেক দাড়াও আসি আমাদের মাঝে এই ধরণীর বুকে ; এস, ফিরে এস, এ মহাতিমিররাশি অপসারি এস, হাসিয়া সকৌতুকে। চেয়ে দেখ সবে ধূলায় পড়িয়া হায়, আৰ্ত্তকণ্ঠে তোমারে ফিরায়ে চায় ; এস এস ফিরে মহাতমিস্রা নাশি। কাল ছিলে তুমি সকল ভুবন জুড়ে ঐ ছোট ঘরে বিশ্ব যে ছিল লীন ; আজ কোথা তুমি, বল—কত কত দূরে ? নিখিল ভুবন আজি যে সংজ্ঞাহীন । সবাকার প্রেম সবার কামনা দিয়ে বাধিতে নারিন্থ ; অবোধ বাসনা নিয়ে শুধু কাদি মোরা অসহায় নিশিদিন । স্নেহে করুণায় চিরদিন সব লাগি কণ কণা ক’রে নিজেরে করেছ দান ; তোমার সেবায় নিয়ত রহিত জাগি বেদনায় ভরা আপনারে ভোলা প্রাণ। আজিকে কেমনে পাশরিয়া প্রিয়জনে রয়েছ আড়ালে একাকী অন্যমনে ? শুনিতে কি পাও ? কে দিবে গো সন্ধান ? এত আকুলতা এত ভালবাসা তব, সে কি শুধু ছিল দু-দিনের খেলাঘরে ? খেলার পুতুল ত্যজিয়া কি অভিনব নবীন ভুবনে গেলে চলি হেলাভরে ? তুহিন-মৃত্যু নিষ্ঠুর কঠিন বলে, ছিন্ন করিয়া জীবনপদ্মদলে, চিহ্ন কি তার মুছি দিল অস্তরে ? ন না মিথ্য এ। সবার চিত্তমাঝে আজি যে তোমার প্রকাশ নিরস্তর ; এক মুহূৰ্ত্ত পাশরিতে পারে না যে তব প্রেমরূপ—জীবনের নির্ভর । আজি হেরি তাই সকল ভুবন ছালি তোমারি পরশ প্রাণে উঠতেছে কালি, বেদনাবিধুর সকরুণ মনোহর। বল একবার “এই ত রয়েছি আমি।” তব স্নেহমাথা কণ্ঠ শুনাও সবে ; নিবিড় স্বধায় ভরি দাও দিনযামী, অলথ প্রেমের নিত্য মহোৎসবে। রূপ-অরূপের দ্বন্দ্ব জুনিবার, জীবন-মরণ মিশে হোক একাকার, অশ্রুত তব বাণীর বঁাশরী-রবে। জীবনে যখন ছিলে আমাদের মাঝে, পাওয়ার মাঝারে না-পাওয়ার ব্যবধান ছিল ক্ষণে ক্ষণে ; তোমার সকল কাজে তোমার প্রেমের পাই নি ত সন্ধান। দেশের কালের ছিল সহস্র বাধ, পেয়েছি কখনো, কতু বা লেগেছে ধাধা ; শাশ্বত আজ তুমি মৃত্যুর দান । । তোমার সেবার মোহন অন্তরালে, রেখেছিলে সবে নিত্য বিরহী ক'বে ; সোহাগে অাদরে লোভন স্বপনজালে, অন্ধে ভুলায়ে রেখেছ মোহের ঘোরে। আজিকে ঠেলিয়া রাখিবে কেমনে, হায়, স্নেহ-লোভাতুর ভিক্ষুরে ছলনায় ? বাধা যে পড়েছ অমোঘ মরণ-ডোরে । নয়নের বাধা বচনের ধাধা দিয়ে গড়েছি তোমারে মাটির প্রতিমা করি ; আত্মবিলাস বাসনা-কলুষ নিয়ে আপন-পূজায় আছিন্থ জীবন ভরি। আজি ঘুচিয়াছে মিথ্যা পূজার ভান ; দেবতার তবু মিলিল কি সন্ধান— মহামৃত্যুর অঙ্কুল সিন্ধু তরি ? তিমির-দুয়ার খুলে গেছে আজ মনে, মরণ আজিকে নিৰ্ম্মম নহে আর ; জীবনের বাধা ঘুচে গেল কোন খনে জীবনে-মরণে হ'ল আজ একাকার । তুমি যে রয়েছ নিখিল ভুবন ঘিরে অামার স্মরণ-বিস্মরণের তীরে মহাজীবনের রচিয়াছ পারাবার ।
