পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা । চলে গেল। সে জানতেও পারলে না—তার এই রহস্তচ্ছলে বলা ছোট কথাটুকু—তার বন্ধ্যা-পত্নীর মৰ্ম্মের কোস্থানটিতে গিয়ে বিঁধে রইলো !••• - প্রিয়জনের মুখের লঘু কথাটিও মানুষের বুকে কত গুরু হয়ে বাজে তা যদি তারা বুঝতো ! "নন্দলাল চলে’ গেলে সুভ হাতের রঙীন ছিটের টুকরাগুলি ছুড়ে ছিটিয়ে ফেলে দিয়ে বিছানার উপরে উপুড় হ’য়ে ছোট বালিকার মত ব্যাকুল উচ্ছ্বাসে কেঁদে উঠল। নিঃশঙ্ক ক্ৰন্দনের বেগে সৰ্ব্বাঙ্গ থক্ থর করে” কেঁপে, ফুলে ফুলে উঠতে লাগ ল••• কত সময়েই তো মামুষ খেলাচ্ছলে ধনুৰ্ব্বাণ ছোড়ে, —কোনও উদ্দেশ্যের বশবৰ্ত্তী হ’য়ে নয়। তারা কি জানে তাদের সেই পেলার তীরটিই কোনও ঘন শাখাস্তরালের অসহায় ছোট পাখীর বুকে বিঁধে গভীর ক্ষত ও রক্তপাত স্বাক্ট করতে পারে ? সুভাষিণী স্বামীর সঙ্গে তীর্থে গেল। তীর্থে গিয়ে কত বটবৃক্ষের তলায় ফল কামনায় আঁচল বিছিয়ে বসে’ থাকে। সাগরে নদীতে প্রদীপ ভাসায় ] সাধু-সন্ন্যাসীর শরণাপন্ন হয়,-কবচ মাদুলি ধারণ করে। স্বামীকে লুকিয়ে কত ব্ৰত উপবাস আচার অনুষ্ঠান করে। ধরা পড়লে লজ্জিত হয়,—অস্বীকার করতে চায়। শ্ৰীক্ষেত্রে গিয়ে স্বভার এক দুরসম্পৰ্কীয়া দিদিমার সঙ্গে দেখা হ’ল । সঙ্গে তার; ষোল-সতেরো বছরের এক অনুঢ়া নাতনী। নাম চিত্র । সমুদ্রের ধারে চক্র তীর্থে এক মস্ত বড় জ্যোতিষী ভাগ্য-গণনা করেন। কর-কোষ্ঠী বিচার করেন। সুভা গেল সেখানে হাত দেখাতে । গিয়ে দেখে তার সেই দিদিমাও গেছেন অনুঢ়৷ নাতনীর কররেখা দেখাবার জন্ত। তরুণী মেয়েটির চাপাফুলের মত সুন্দর নরম হাতখানি জ্যোতিষীর মোটা কর্কশ হাতের উপরে তুলে দিতে দিতে তার দিদিমা বললে—বাবা, আমার এই নাত নীটির কবে বিয়ে হবে বলে দিন দয়া করে?-- জ্যোতিষী মেয়েটির পল্লবের মত কচি হাতথানি নজের বাম হাতে ধরে ডান হাতে ‘ম্যাগ্লিফায়িং গ্ল্যাস নয়ে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে মেযেটির কর-রেখা দেখতে লাগলেন। গম্ভীরমুখে এবং ততোধিক গম্ভীরকণ্ঠে জ্যোতিষী ললেন—এমেয়ে আপনার খুব সৌভাগ্যবতী হবে। বে ধনীর ঘরে এর ৰিয়ে হবে-আর এর গর্ভে মুলক্ষণ পরম-ভূষা ഹTarunnoBot (আলাপ)കുകാ శిల్సి দীর্ঘায়ু রাজচক্রবর্তী ছেলে হবে। আপনার নাতনীয় স্বামী-দৌভাগ্যের চেয়েও সস্তান-দৌভাগ্য বেশী উজ্জল। : স্বভা সাগ্রহে শুনলে। মেয়েটির প্রতি বার বার তাকিয়ে দেখতে লাগল। তারপর নিজের বাম হাতখানি এগিয়ে ধরে শুষ্ক করুণ কণ্ঠে বললে—ঠাকুর, দেখুন তো—আমার সস্তান স্থানটা কি রকম ?... স্বভার কণ্ঠস্বরে কুষ্ঠা যেন জড়িয়ে এল। জ্যোতিধী মুহূৰ্ত্তেকের জন্ত মুভার আপাদমস্তকে র্তার স্বতীক্ষ দৃষ্টি বুলিয়ে নিলেন। সন্ত্রান্ত ভদ্রঘরের মহিলা।—মুন্দর দৃঢ় গঠনের চেহারা ---মুখে চোখে একটি কাতর তৃষ্ণ বা অতৃপ্তির বেদন মাখানে । 象 জ্যোতিষী স্বভার হাতখনি নেড়ে চেড়ে বলতে লাগলেন--সস্তান-স্থান ?--তা—সস্তান-স্থান তো তোমার তেমন ভালো দেখচিনে, মা ! দুৰ্ব্বল-ই খুবই দুৰ্ব্বল— উহু—সস্তান তো মোটেই নেই ! তাই তো ? জ্যোতিষী ক্রকুঞ্চিত করে কিছুক্ষণ স্বভার হস্ততালুর প্রতি স্থিরনেত্রে তাকিয়ে থেকে তারপর মুভার মুখের পানে চেয়ে প্রশ্ন করলেন,-ছ। মা, তুমি কি বন্ধ ? মুভ কিছু উত্তর দিলে না। জ্যোতিষীর হাতের ভিতর হ’তে নিজের হাতখান টেনে নিয়ে উঠে চলে এল । পুরীর সমুদ্র-কিনারায় সুভ সকাল সন্ধ্যা স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যেত । সেই দূর-সম্পৰ্কীয়া মাস্তুতে বোন চিত্রাকে বালু-বেলায় দেখতে পেত এক এক দিন। তাকে দেখলেই মুভ যেন কেমন উন্মুনা হয়ে পড়ত নন্দলাল পাশে চলতে চলতে হয়তো কোনও একটা প্রশ্ন করে” অষ্টমনস্ক মুভার কাছ থেকে উত্তর পেত না । স্ত্রীর কর্ণধখানি ছুয়ে কিম্বা হাতখানি ধরে’ মূদ্র বাঁকুনি দিয়ে নন। সকৌতুককণ্ঠে বলত—কি গো বেয়ান ঠাকুরাণি, সমুদ্রের ধারে এসে 'কবি' হয়ে উঠলে নাকি ?— সুভা অপ্রতিভ ও লজ্জিত হ’য়ে তাড়াতাড়ি বলে-আ: কী যে ছেলে-মামুষি কর ভূমি !! লোকে শুনতে পেলে কি ভাব বে বলতো ? * পুরীতে স্বভাদের বাড়ী চক্রতীর্থে। । স্বৰ্গদ্বার হতে খবর এল—স্বভার সেই দিদিমার কলেরা হয়েছে। স্বভা ও নন্দ গিয়ে বিদেশে আত্মীয়ুশূন্ত বৃদ্ধ৷ আত্মীয়াটির দেখা শোনা সাহায্য তদারক করূলে । বুদ্ধা ঘণ্টা কতকের মধ্যেই রোগ-যন্ত্রণার সঙ্গে সঙ্গে ভব-যন্ত্রণা এড়ালেন। আপনার বলতে তাদের কেউই বিশেষ নেই।