পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৩৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্তু নরম্যানদের ইংলও বিজয়ে ও মুসলমানদের বঙ্গ বিজয়ে অনেক ফরাঙ্ক। নরম্যান ও সেক্সন জাতিতে ও ধৰ্ম্মে একই ছিল ; তাহদের কেবল ভাষা বিভিন্ন ছিল। হিন্দু মুসলমানের ধৰ্ম্ম জাতি ও ভাষা সকলই বিভিন্ন ছিল। সুতরাং কয়েক শতাব্দীর পর ইংলণ্ডে নরম্যান ও সেক্সনের মধ্যে কোন প্রভেদই রহিল না, কিন্তু বহু শতাব্দীর পর বঙ্গে এখনও হিন্দু মুসলমানের সেরূপ অবস্থা ঘটে নাই। অন্ততঃ ধৰ্ম্মে এখনও তাহারা সম্পূর্ণ বিভিন্ন। বঙ্গে হিন্দু মুসলমানের অবস্থারও অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছে এবং সেই অনুসারে বাঙ্গলা ভাষারও যে কিছু তারতম্য না হইয়াছে এরূপ নহে। “সহরের চকমিলান দালান ইমারৎ” ছাড়িয়া এখন মুসলমানগণ “দেহাতের গয়রাবাদী জমী” সমূহ দখল করিয়াছে। “জবরদস্ত জমাদারের আসা সোটা” এখন “গরিব রাইয়তের আসানড়ি” হইয়া পড়িয়াছে। “কাজীসাহেব” এখন আর “মিয়াদ” দেন না তিনি “কাবিন” “রেজঃরী” করিয়াই থালাস । তাহার সেই অৰ্দ্ধগজ লম্বা “তাজ” এখন ক্ষুদ্র “টুপী”র আকার ধারণ করিয়াছে। পূৰ্ব্বে সহরে” থাকিতে আরবী ভাষা হইতে গৃহীত “চক" বাজার বুঝাইত এখন “দেহাতে” আসিয়া তাহার অর্থ হইল ক্ষেত। এখন মুসলমানেরা আর “টাকা” লইয়া “খাজান তহসীল” করে না বরং "রুপিয়া” দিয়া “দেয় কর শোধ” করিয়া থাকে। মুসলমানগণকে উচ্চ “মসনদে” বসিয়া এখন আর "বাদসাহী থেয়ালে” ঝিমাইতে হয় না "জিরাতির মমুম বেমমুম” ঠাওরাইতেই এখন “হয়রান পেরেসান লবেজান ।” মোটের উপর দেখিতে গেলে তিন শ্রেণীর মুসলমান -তিন ভাষা লইয়া বাঙ্গলা দেশে আসিয়াছিলেন ; রাজা আসিয়াছিলেন পারষ্ঠ ভাষা লইয়া, সৈন্তগণ আসিয়াছিলেন তুর্কী ভাষা লইয়া এবং ধৰ্ম্ম প্রচারকগণ আসিয়াছিলেন আরবী ভাষা লইয়া। সুতরাং এই তিন ভাষারই প্রচুর মুসলমানী শব্দ বাঙ্গুল ভাষায় দেখিতে পাওয়া যায়। . মুসলমানগণ যোদ্ধাবেশে প্রথম বাঙ্গলা দেশে প্রবেশ করেন ਕ੍ਰੋ: অনেক যুদ্ধ সম্বন্ধীয় মুসলমানি শব্দ বাঙ্গলা ভাষায় দেখিতে পাওয়া যায় ; যথা তীর, কামান, তোপ, কোৰ, জীন, লাগাম, নিসান, নাকাড়, বন্দুক, বারুদ, প্রবাসী। . [ ৮ম ভাগ । ইত্যাদি। কালক্রমে মুসলমানগণ বাঙ্গল বুেশের রাজা হইলেন এবং রাজকীয় কাৰ্য্য সম্বন্ধীয় অনেক মুসলমানী শব্দ বাঙ্গল ভাষায় স্থান পাইল ; বর্তমান সময় আফিস আদালতের ব্যবহৃত শতকরা নিরানব্বই শব্দই মুসলমানি। “হাকিম” হইতে “পেয়াদা” “উকীল” হইতে “মওয়াক্কেল” “ফরিয়াদি” হইতে “কয়েদী” সমস্তই যে মুসলমানের হাতে গড়া ইহা সকলেই জানেন সুতরাং তাহার উল্লেখ করা বাহুল্য মাত্র। রাজ্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানগণ ব্যবসা বাণিজ্যে প্রবৃত্ত হইলেন সুতরাং বর্তমান সময় ব্যবসা বাণিজ্য সম্বন্ধীর প্রচুর মুসলমানী শব্দ বাঙ্গলা ভাষার দেখিতে পাওয়া যায় । আমদানী, রপ্তানী, মাশুল, তেজারতী, পেশা, জমা খরচ, হাওলাত বরাত ইত্যাদি সমস্তই মুসলমানী। এইরূপ রাজকাৰ্য্য ও বাণিজ্য উপলক্ষে মুসলমানগণ বাঙ্গলা দেশে বসবাস করা হেতু গৃহের অনেক জিনিসপত্রও মুসলমানী হইয়া পড়িল ; যথা জিনিস, মাল, আসবাব, কুরসি, মেজ, চামচ, তক্তপোষ, পাপোষ, বালিশ, ফরস, চাদর, হুক, পরদা, আতরদান, গোলাবপাশ, ইত্যাদি। এ সব ত গেল দ্রব্যের নাম ; ক্রমে অনেক মুসলমানী ভাবব্যঞ্জক শব্দও বাঙ্গলা ভাষায় ঢুকিতে আরম্ভ করিল। এই সমস্ত ভাবব্যঞ্জক শব্দের মধ্যে কতকগুলি যুদ্ধ সম্বন্ধীয়; যথা হাঙ্গামা, ফসাদ, জোর, জুলুম, জবরদস্তি, ফরিয়া, ইত্যাদি। কতকগুলি মনুষ্য প্রকৃতি সম্বন্ধীয় ; যথা মেজাজ, গোস, জেদ, তবিয়ত, ইত্যাদি এবং কতকগুলি আমোঙ্গ প্রমোদ সম্বন্ধীয় যথা খুলী, তামাসা, মজ, শিকার, ইত্যাদি। এ সমস্ত বিশেষ্য ছাড়া অনেক মুসলমানী বিশেষণও বাঙ্গলা ভাষায় দেখা যায়, যেমন গরিব, বেচারা, বেহায়া, বেমালুম, বজাত, বদ, খারাপ, গোলাবী, দরকারী ইত্যাদি। এতদ্ব্যতীত আরবী ভাষা হইতে গৃহীত "ওয়ালা ও পারস্ত ভাযা হইতে গৃহীত মস্ত, এই উভয়ের সংযোগে এক প্রকার কর্তৃবাচক শব্দ বাঙ্গল ভাষায় গঠিত হইয়া থাকে; যথা শ্ৰীমন্ত, ভাগ্যমন্ত, আকেলমস্ত, দানেশমস্ত, তামাকওয়ালা, টিকাওয়ালা, টিকিওয়াল, ইত্যাদি। আবার পারস্ত ভাষার “থোর” নানা শব্দের সহিত সংযুক্ত হইয়া বাঙ্গলা ভাষা গালির ভাণ্ডার বাড়াইয়া দিয়াছে; যেমন, গাজাখোর, নেশা খোর, তামাকখোর, সরাবখোঁর, হার", ইত্যাদি। ১২শ সংখ্যা । ] মোটের উপর বিশ্যে ও বিশেষণ পর্যন্তই বাঙ্গল ভাষায় মুসলমান প্রভাব পৌছিতে সক্ষম হইয়াছে। কোন মুসলমানী সৰ্ব্বনাম কি ক্রিয় বাঙ্গলা ভাষায় দেখা যায় না ; যদি দেখা যাইত তবে বাঙ্গলা ভাষা আর বর্তমান বাঙ্গল ভাষা থাকিত না । উর্দুর সঙ্গে ও বাঙ্গলা ভাষার সঙ্গে এই থানেই বেমিল দেখা যায়। আরবী ও পারসী বিশেষ্যের সঙ্গে বাঙ্গলা সহযোগী ক্রিয় “করা” যোগ করিয়া এক প্রকার মুসলমানী ক্রিয় গঠন করা হয় বটে কিন্তু উহাকে ঠিক খাটি মুসলমান ক্রিয়া বলা যায় না। উদাহরণ স্থলে উপরে যে সমস্ত মুসলমান শব্দের তালিকা দেওয়া গিয়াছে তাহাদের প্রায় সমস্তই লিখিত বাঙ্গলা ভাষায় প্রচলিত দেখা যায়। সকলেই স্বীকার করিবেন যে ঐ সমস্ত শব্দ ছাড়া আরও অনেক মুসলমানি শব্দ বঙ্গীর মুসলমানগণ ব্যবহার করিয়া থাকেন। বটতলার যে সব মুসলমানী পুথী আছে এবং যাহা অৰ্দ্ধ শিক্ষিত মুসল্লমানদের অতি আদরের বস্তু, ঐ সকল পুথির মধ্যেও এরূপ অনেক আরবী ও পারসী ভাষার শব্দ দেখিতে পাওয়া যায়, যাহা এখনও বাঙ্গলা ভাষায় সৰ্ব্বত্র গৃহীত হয় নাই। ঐ সকল শব্দের মানি অনেক সময় বাঙ্গালী মুসলমানগণই ভালরূপ বুঝিতে পারেন না, হিন্দুগণত দূরের কথা। যেমন কারবালা যুদ্ধ ক্ষেত্রে মহাত্মা হোসেন (রাঃ আঃ) তনয়৷ বিবি সখিনার সঙ্গে তদীয় ভ্রাতুপুত্র মহাবীর কাসিমের বিবাহ সম্পন্ন হওয়া মাত্রই যখন কাসিম যুদ্ধ ক্ষেত্রাভিমুখে অগ্রসর হইতেছেন তখন কোন পুথিলেখক বিবি সখিনার মুখে বলাইতেছেন :– “আগে যদি জানতাম্ কাসিম তুমি জঙ্গের পেয়ার, + “ন। দিতাম ৰিয়ার এজিন না পরিতাম সেয়ার।" গঠিত হইয়াছে। সুতরাং তাহাদের সর্বনাম গুলি প্রায়ই এক ধরণের কিন্তু উৰ্দ্দ, ভাষার সর্বনাম গুলিতে পারস্ত ভাষার সর্বনাম গুলির ছায়া অতি স্পষ্ট । + জঙ্গ—লড়াই যুদ্ধ পেয়ারা—প্রিয় 2. এজিন—অনুমতি ༡༣། །ས་ཟ་ས༔ অলঙ্কার বিশেষ _ " - বঙ্গা মুসলমানদিগের भारुडाचा कि ?

  • বাঙ্গল, উর্দ, পারসী ও সংস্কৃত সকলই এক মূল ভাষা হইতে

이o》 এই দুই পংক্তিতে ‘জঙ্গ, পেয়ারা,’ ‘এজিন’ ও সেয়ারা এই চারিটাই মুসলমানী শব্দ। "জঙ্গ” এবং পেয়ার, হিন্দু মুসলমান সকলেই হয়ত বুঝিবেন : ‘এজিন’ শব্দটা মুসলমানগণ বুঝিলেও হিন্দুগণ বুঝিবেন না ; બરા ‘সেয়ারা’ শব্দটর সঠিক অর্থ অনেক মুসলমানও ভালরূপ বুঝিবেন কি না সন্দেহ। এই সব পুথিতে শতকরা প্রায় পঞ্চাশটাই মুসলমানি শব্দ ; কিন্তু তাহা হইলেও ইহাদের ভাষাকে উর্দু বলা যাইতে পারেন। কারণ যে সকল মুসলমানি শব্দ ইহাদের মধ্যে পাওয়া যায় তাহাদের সকলেই বিশেষ্য কি বিশেষণ, সৰ্ব্বনাম কি ক্রিয়া নাই বলিলেও চলে ; সুতরাং ইহাদের ভাষার ব্যাকরণের সঙ্গে উর্দু ভাষার ব্যাকরণের কোন ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই নাই। অতএব আরবী ও পারসী শব্দ অধিক পরিমাণে ব্যবহার করেন কেবল এই অজুহাতে বঙ্গীয় মুসলমানগণ উর্দ ভাষাকে তাহাম্বের মাতৃভাষা বলিয়া মনে করিতে পারেন না। বাঙ্গলা ভাষায় অনেক মুসলমানী শব্দ এরূপ অবিকৃত ভাবে স্থান পাইয়াছে যে তাহ ভাবিলে আশ্চৰ্য্যাম্বিত হইতে হয়। মুদূর আরব দেশের মরুভূমি হইতে উত্থিত তামাসা, খেয়াল, ফউত, ফেরার, ইত্যাদি শব্দ সমূহের বঙ্গীয় প্রতিধ্বনি অতি শুদ্ধ ও সঠিক। আরব দেশের ‘আতরের’ ও পারস্ত দেশের ‘গোলাবের মুগন্ধ বঙ্গীয় আতরে ও গোলাবে প্রায় অটুট রহিয়াছে। আরবী বন্দুক’ ও তুর্কী । ‘তোপ’ বাঙ্গলায় আসিয়া একেবারে বেকল হইয় পড়ে নাই। । অথচ এমন অনেক মুসলমানী শব্দও দেখিতে পাওয়া যায় যাহা বাঙ্গলা দেশের জল পানিতে একেবারে খাস বাঙ্গালী - | - হইয়া পড়িয়াছে, যেমন :–

  • সংস্কৃত ও পারসী উভয়ই আধ্যভাব, স্বতরাং পারসী ও সংস্কৃত SH শব্দ সমূহের মধ্যে যথেষ্ট আক্ষ্মীরতা রহিয়াছে। পেয়ারা শব্দটা সংস্কৃত । প্রিয় হইতে আসিয়াছে বলিয়া কেহ কেহ বলিতে পারেন কিন্তু পারসী । "পেয়ারা হইতে উহার উৎপত্তি হওয়ার সুম্ভাবনা কিছু বেশী বলির dद्भो५ श्ख्न । . 豎 _。 - . উর্দু ও বাঙ্গল উভয়েই আৰ্যভামা বালা পরিগণিত হইতে পারে । কিন্তু মুসলমানদের ব্যবহৃত ভাষার ও উর্দু ভাষার মধ্যে এরূপ কোন ৷ সম্বন্ধ নাই যাহাতে উর্দু, ভাষাকে তাহদের literary ভাষা বলা যাইতে । পারে। * ||