পাতা:প্রবাসী (অষ্টম ভাগ).pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

、 হারানবাবু দ্রুতপদে মুচরিতার অনুবর্তন করিলেন কিন্তু তাহাকে ধরিয়া উঠিতে পারিলেন না। হারানবাৰু দূর হইতে কহিলেন "মুচরিত, একটা কথা আছে।” স্বচরিতা কহিল “আজ আমি ভাল নাই।” বলিতেই তাহার শয়নগৃহে কপাট পড়িল । এমন সময়ে বরদাসুন্দরী আসিয়া অভিনয়ের পালা দিবার জন্য যখন বিনয়কে আর একটা ঘরে ডাকিয়া লইয়া গেলেন তাহার অনতিকাল পরেই অকস্মাৎ ফুলগুলিকে আর সেই টেবিলের উপরে দেখা যায় নাই—সে রাত্রে ললিতাও বরদাসুন্দরীর অভিনয়ের আখড়ায় দেখা দিল না—এবং স্বচরিতা "খুষ্টের অনুকরণ" বই খানি কোলের উপর মুড়িয়া ঘরের বাতিটাকে এক কোণে আড়াল করিয়া দিয়া অনেক রাত পৰ্য্যন্ত দ্বারের বহিৰ্ব্বৰ্ত্তী অন্ধকার রাত্রির দিকে চাহিয়৷ বসিয়া রছিল। তাহার সম্মুখে যেন একটা কোন অপরিচিত অপূৰ্ব্ব দেশ মরীচিকার মত দেখা দিয়াছিল ; জীবনের এতদিনকার সমস্ত জানাশুনার সঙ্গে সেই দেশের একটা কোথায় একান্ত বিচ্ছেদ আছে ;--সেই-জষ্ঠ সেখানকার বাতায়নে ঘে আলোগুলি জলিতেছে তাহ তিমির নিশীথিনীর নক্ষত্র মালার মত একটা স্বদুরতার রহস্তে মনকে ভীত করিতেছে; অথচ মনে হইতেছে, জীবন আমার তুচ্ছ, এতদিন যাহা নিশ্চয় বলিয়া জানিয়াছি তাহা সংশয়াকীর্ণ এবং প্রত্যহ যাহা করিয়া আসিতেছি তাহা অর্থহীন-ঐখানেই হয়ত জ্ঞান সম্পূর্ণ হইবে, কৰ্ম্ম মহৎ হইয়া উঠিবে এবং জীবনের সার্থকতা লাভ করিতে পারিব। ঐ অপূৰ্ব্ব অপরিচিত ভয়ঙ্কর দেশের অজ্ঞাত সিংহদ্বারের সম্মুখে কে আমাকে দাড় করাইয়া দিল । কেন আমার হৃদয় এমন করিয়া কঁাপিতেছে—কেন আমার পা অগ্রসর হইতে গিয়া এমন করিয়া স্তব্ধ হইয়া আছে ? বলিতে সমসাময়িক ভারত। (পিরিউর ফরাসী হইতে ) গ্রাম্য ভারত | > আবু-পৰ্ব্বতের উপর আমি কতকগুলি দেবালয় দর্শন করিয়া विमल आननडैनडभ করিলাম। আমাদের ক্যাথিড্রাল

প্রবাসী । ৮ম ভাগ । গির্জায় যে অংশ গায়কবৃন্দের জন্য নির্দিষ্ট-এই ਾਂ দেবালয়ের মধ্যে সেই অংশটিরও সমাবেশ হয় না। দালানগুলি ক্ষুদ্র ও নিম্ন, কিন্তু শিল্পী এই সকল গম্বুজের ভিতর-ছাদের গোলাপের নক্সার, সরু সরু গুভ্র থামের লতাপাতার ভূষণে, এবং যে সকল পৌরাণিক দেবমূৰ্ত্তি থামকে বেষ্টন করিয়া রহিয়াছে সেই সকল দেবমূৰ্ত্তির রচনা এমন একটা ধৈৰ্য্যের পরিচয় দিয়াছে, তাহার মধ্যে এমন একটা প্রাণ সঞ্চার করিয়াছে, এবং মৰ্ম্মর-প্রস্তরগুলি এরূপ ধ্যানে মগ্ন তাহদের এরূপ প্রশান্তভাব যে, এই ক্ষুদ্রাদর্শের মন্দিরগুলি সৌন্দর্য্যের পরাকাষ্ঠী বলিয়া অনুভূত হয়। ইহাও কি তোমার মনে হয় না যে, এই ক্ষুদ্র গ্রাম্য নগরগুলি—যাহার দিগন্ত এত ক্ষুদ্র, যাহার খিলানমণ্ডপগুলা এত নিম্ন—উহারাজীবন-সমস্তাটি কেমন সহজভাবে ও নিজের ধরণে সুন্দরন্ধপে মীমাংসা করিয়াছে ? উহাদের অভাব খুবই কম, তাহাও তৎক্ষণাৎ পূর্ণ হইতেছে,—বিনা প্রযত্নে পূর্ণ হইতেছে। চমৎকার সামাজিক বন্ধন, চমৎকার পরম্পর-সাপেক্ষত । চমৎকার সোপান-পরম্পরা। ইহার তুলনায়, অস্থানে সমাজ অসম্বদ্ধ জনতা বলিলেও হয়—অনৈক্য, বিশৃঙ্খলা ও । সংঘর্ষে পূর্ণ। বরং এই সমাজ অতিমাত্র পূর্ণতা, অতিমাত্র সৰ্ব্বাঙ্গীনতা, অতিমাত্র সৌষ্ঠব লাভ করিয়াছে ; যেন চর। বিকাশের জন্ত তিলমাত্রও স্থান রাখে নাই। এতক্ষণ আমরা এই ক্ষুদ্র নগরগুলির আর্থিক অবস্থাই আলোচনা করিলাম। এক্ষণে উহাদের রাষ্টিক ও সামাজিক গঠন সম্বন্ধে আলোচনা করিব। অঙ্গকে একত্র বাধিয়া রাখিয়াছে, যে সকল মুখ্য শক্তি সৰ্ব্বত্র সঞ্চরণ করিতেছে, সকলকে শাসন করিতেছে, সহজ পথ ধরিয়া সহজভাবে অবাধে চলিতেছে, এক্ষণে সেই সমস্তের আলোচনায় প্রবৃত্ত হইব। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, গ্রামের শাসনভার কৃষকমণ্ডলীর হস্তে। তাহাতে ভূতাদের, কারিগরদের কোন হাত নাই। কখন, কৃষকসমাজ অব্যবহিতরূপে নিজেই গ্রাম শাসন করে এবং প্রধানবংশের কর্তৃপক্ষেরা 'মিউনিসিপালিটি" গঠন করে ; কখনব, কোন বংশানু, ক্রমিক প্রধানের হস্তে উহারা নিজ অধিকার ছাড়িয়া দেয়। যে সকল বন্ধন-স্বত্র বিভিন্ন । মিলিয়া একটা স্থায়ী । অমল-ধবল,মন্দিরের কুলঙ্গির মধ্যে বসিয়া যে সকল ভক্ত সাধু । s ২য় সংখ্যা । ] -প্রথমোক্ত বর্গের গ্রামগুলিতে পালেমেন্ট-ধরণের এক প্রকার শাসনপ্রণালী প্রচলিত আছে। এনষ্ঠী ( Anstey ) বলেন,—"প্রাচ্য-মহাদেশই ‘মু্যনিসিপালিটি'র জনক।” সিদ্ধাস্তবাগীশ্বের অনুমান করেন, “কুলানুক্রমিক প্রধান,” পরে প্রবর্তিত হয় ; আদিম আদর্শ অনুসারে, সকল গ্রামেরই শাসনকাৰ্য্য ক্ষুদ্র পালেমেণ্টদিগের দ্বারা পরিচালিত হইত। ভারত যে স্বাধীন বিচারতর্কের অনুরাগী তাহাতে কোন —মদহ নাই। আমরা অনতিবিলম্বেই দেখাইব যে, এই স্বাধীন বিচারতর্ক সেই সকল বিষয় পৰ্য্যন্ত প্রসারিত হইয়াছে, যে সকল বিষয়ে আমরা এখনও নিরুপায়। যে পঞ্চাৎ, জা’ত-সংক্রান্ত ব্যাপারের নিয়ামক, উহা একটি অপূৰ্ব্ব মৌলিক ব্যবস্থা। যাই হোক অনেকগুলি গ্রাম্যসমাজই নিজের কাজ নিজে নিৰ্ব্বাহ করে ; পরিবারের কর্তারা মিলিয়া একটা স্থায়ী পরিষৎ গঠন করে ; ব্যবস্থা পরামর্শ ও শাসনকার্য্য উভয়ই তাহাদের কাজ ; এই পরিযন্ধের অন্তভূত সকল ব্যক্তিরই সমান ক্ষমতা, এবং প্রত্যেকেই এই ক্ষমতা সযত্নে রক্ষা করিয়া থাকে। দ্বিতীয়োক্তবর্গের গ্রামগুলির শাসনকাৰ্য্য-পরিচালক প্রধানেরা পূৰ্ব্বতন বনিয়াদি কুল-প্রধানদেরই বংশধর ; তাহারাই গোড়ায় গ্রাম পত্তন করে কিংবা সেই গ্রামে নিজ প্রাধান্ত স্থাপন করে। এই কৌলিক প্রাধান্ত বশতই এই সকল প্রধানের, সরকারি উৎসব অনুষ্ঠানের সময়ে অগ্রাসন প্রাপ্ত হয় ; এই জন্তই, ইহার একটা সৰ্ব্ববাদিসন্মত প্রভূত্ব, এবং শাসন ও বিচারকার্য্যে উচ্চ পদমর্য্যাদা লাভ করিয়া থাকে। তাহাদের গৃহই (“ঘরি” ) গ্রামের পাথুরে কেল্লা’। অধুনা যিনি ভূস্বামী, পূৰ্ব্বপূৰ্ব্ব শতাব্দীতে তিনিই যুদ্ধের নেতা। সেই ব্যক্তিই সশস্ত্র শক্রর বিরুদ্ধে, কিংবা দন্ধ্যদলের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করিয়াছিল। অধুনা "ব্রিটানিকী শাস্তি" তাহার কার্য্যক্ষেত্র কমাইয়া দিয়াছে, কিন্তু তাহার গৌরব-প্রতিপত্তির কিছুমাত্র হ্রাস করে নাই ; কেননা, সে এখনও নিজ পদেই প্রতিষ্ঠিত আছে ; নিজ গ্রাম ও কেন্দ্রগত রাজশক্তি—এই উভয়ের মধ্যে সে মধ্যস্থরূপে নিৰ্ব্বাচিত হইয়াছে। মুনিসিপ্যালিটি-সমম্বিত গ্রামগুলিতে, ইংরাজ-সরকার একজন কৰ্ম্মচারী নিযুক্ত করিয়াছেন ; সমসাময়িক ভারত । डाशन ক্ষমতা কতকটা "মেয়র ও জসটিস অফ দি পীসের” &" ক্ষমতার মত,—তিনিই “লম্বরদার”। বহু পূৰ্ব্ব হইতেই, গ্রামের মধ্যে একজন লিপিকারের প্রয়োজন হইয়াছিল ; সেই লিপিকার গ্রামের হিসাবাদি লিখিত, তাহার নাম "করণম’। লেখাপড় না জানিয়াও গ্রামের মধ্যে কেহ-না-কেহ শীঘ্রই প্রধান হইয়া পড়ে। যেখানে ভূমি অসংখ্য অংশে বিভক্ত, যেখানকার স্বত্বাধিকার অত্যন্ত জটিল সেখানে একমাত্র কিরণম’ই এই সমস্ত জটিলতার নিরাকরণ করিতে পারে। করণমের উপরেই লম্বরদ্বার। করণম ও লম্বরদার এই দুইজনে মিলিয়া স্বকীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করিয়া আশ্রিত গ্রামবাসীদিগের সৰ্ব্বনাশ করে। কোন ব্যক্তির পত্নী যদি সুন্দরী হয়, আর সে যদি চোখ বুজিয়া না থাকে, তাহা হইলে তাহার অবস্থা বড়ই খারাপ। একজন আমাকে বলিল, করণম জাল হিসাব কিংবা জাল পত্র প্রস্তুত করিতে কিছুমাত্র সঙ্কুচিত হয় না, এবং এইরূপ হিসাব প্রস্তুত করিয়া, সেই স্ত্রীলোকের নামে কিংবা ক্ষেতের নামে আদুঙ্গভুক্ত-মনেক সময়ে প্রতিবাদীর অজ্ঞাতে ) নালীশ রুজু করিয়া দেয় এবং এইরূপে ডিক্ৰী করিয়া তাহার সৰ্ব্বনাশ করে, তাহাকে বে-ইজৎ করে. এইরূপ পিশাচস্কৃত্তি অসম্ভব হইত যদি ইংরাজ সরকার গ্রামের বিচার সম্বন্ধীয় স্বাতন্ত্রা হরণ না করিতেন। কোন যুরোপীয় রাজসরকারের এ বিষয়ে দক্ষতা আদেী নাই। উল্লেদেশের কোন ব্যবস্থাপ্রণালী যতই অকিঞ্চিৎকর বলিয়া প্রতীয়মান হউক না, তাহাতে স্বল্পমাত্র পরিবর্তন করিতে হইলেও, তাহার পূৰ্ব্বে দীর্ঘ অনুশীলনের আবশ্বক। ক্ষুদ্র আকারে পরিণত হিন্দুসমাজতন্ত্রই গ্রাম্যসমাজ। এই সহজ সংক্ষিপ্ত আকারেই বৃহৎ সমাজটি আমাদের নিকট ধরা দেয়। গ্রামের দিগন্তটি আমাদের দৃষ্টি-সীমার মধ্যে অবস্থিত, সুতরাং ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্মের যে তিনটি মূল শক্তি গ্রামের উপর কার্য্য করিতেছে তাহ সহজেই আমাদের দৃষ্টিপথে পতিত হয়। সেই তিনটি শক্তি-বৰ্ণভেদপ্রথা, বংশানুক্রমিকতা ও ধৰ্ম্ম। সমাজ ও ধৰ্ম্ম এই উভয় লইয়াই ব্রাহ্মণ্য ; এই ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রে সমাজ ও ধৰ্ম্ম পরম্পরের সহিত হচ্ছেন্ত বন্ধনে ञांदक । ধৰ্ম্মটি অতি মুক্ত, অতি উদ্বার ;–কোন বিশ্বাসকেই, কোন