পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৮ প্রবাসী \రి8ు বিগ্রহগুলি অঙ্গহীন দেখিয়া ক্ষুন্ন হইয়াছিলেন। রাত্রে জগন্নাথ তাহাকে স্বপ্ন দিলেন । ঠাকুরে বোইলে রাজ হেইলুকি বাই কলিযুগে বসিৰু বউধ রূপ হোই —কৃষ্ণদাস-বিরচিত "দেউলতোলা [ বাই=পাগল । সৰ্ব্বপ্রথম বোধ হয় ধৰ্ম্ম-পুজা বিধানে জগন্নাথ বুদ্ধরূপে বন্দিত হইয়াছেন । “জলধির তীরে স্থান বোদরূপে ভগবান হয় তুমি কৃপাবলোকন” (পৃ. ২৩৮)। পরবত্তী কালে বহু উৎকলীয় গ্রন্থে জগন্নাথ বুদ্ধস্বরূপ কল্পিত হইয়াছিলেন । গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলিয়াছেন যে, দুষ্টদমন ও ধৰ্ম্মরাজ্য প্রবর্তনের জন্য তিনি যুগে যুগে আবিভূত হইবেন। ( ৪৭-৮) কলিযুগে জগন্নাথেরও হইল সেই কাজ । কিন্তু দুষ্ট লোকগুলা নীলাচলে জগন্নাথ অধিষ্ঠিত হইবার পরেও জন্মিতে লাগিল । কাজেই বুদ্ধ-জগন্নাথের অবতার অর্থাৎ সচল সংস্করণের প্রয়োজন হইতে লাগিল । স্বয়ং গৌতম-বুদ্ধ জগন্নাথ-বুদ্ধের অন্যতম অবতার হইলেন। তিনি কিন্তু পুথিবীতে এক শত বৎসরও থাকিলেন না । কারণ জগন্নাথের অন্ত না থাকিলেও বুদ্ধের ছিল। চৈতন্যদেবও জগন্নাথের অবতার কলিযুগে দারুব্ৰহ্ম রূপ মে হোইব । নয়নয়ে দেখিলে পাপকু মুক্ত হেব। তহি মধ্যরে অৰ্দ্ধ অবতার যে হোইব । কিঞ্চিৎ দিনরে যে চৈতন্য নাম হেব । নিরাকার দাসের ঝুমর সংহিতা, ২২শ অধ্যায় { তহি –তার ; হেব = হইবে } তিনি বুদ্ধ-অবতাররূপে কল্পিত হইলেন, তাহার তিরোভাবের পরে। পরবত্তী কালে আরও কয়েকটি বুদ্ধঅবতার দেখা দিয়াছিল । সপ্তদশ শতকের শেষভাগে দেখি, রামানন্দ ঘোষ হইয়াছেন “কলিযুগে জীব লাগি বুদ্ধ-অবতার”। এই বুদ্ধাবতারের উদ্ধেশ্ব ছিল— যবল প্লেচ্ছের রাজ্য বলে কাড়ি লব একচ্ছত্র রাজা করি দারুব্রহ্মে দিব । (“বুদ্ধাবতার রামানন্দ ঘোষ" হরপ্রসাদ সংবৰ্দ্ধন লেখমালা) যশোমতী মালিকায় গরুড়কে জগন্নাথ বলিতেছেন, রাজা মুকুন্দদেবের একচল্লিশ রাজ্যাঙ্কে “বুদ্ধ রূপকু তেজি থিৰু গুপতরে” উনবিংশ শতকেও অলেখ বা মহিমা ধৰ্ম্ম-প্ৰবৰ্ত্তক মহিমা স্বামীর উদয় হইয়াছিল। মহিমা স্বামী :– বুদ্ধ রূপকু ধরি গুরুরূপে জ্ঞান দেবে কুন্তীপট দেই বানা প্রকাশ করিবে । [ কুন্তীপট=কুন্তী গাছের ছাল , বানা=পতাকা ] শুামঘনের ‘অলেখ-লীলা ও শ্রীধর দাসের সিদ্ধচন্দ্রিকায়' মহিমা স্বামীকে বুদ্ধ-অবতার বলা হইয়াছে। এখন দেখা গেল, বুদ্ধ-অবতার-কল্পনা জগন্নাথের মাহাত্ম্য বাড়াইবার জন্যই গড়িয়া উঠিয়াছিল। কৃষ্ণদাসের ‘বউদ-ব্ৰহ্ম-গীতিতে’ ইহাও দেখি যে, দশ অবতারের বাকী নয় জনকেও জগন্নাথ-বুদ্ধ কুক্ষিগত করিয়াছেন । বউদ রূপে নীলগিরি শ্ৰীজগন্নাথ বিজে করি বউদ নীলাদ্রি গোসাই বসিছি যোগারূঢ় হোই । কাঠ পাষাণ রূপ ধরি দারু ব্ৰহ্মরে বিজে করি। কেতেহে যুগত যাইছি বডদ অবতার অছি । বউদ প্রভু নিরাকার হোইলে দৃশ অবতার। মানবরূপ দেহ ধরি সন্থ পালিন দুষ্ট মারি । সে দশ অবতীর ক্ষয়ে বিজয়ে বউদ রূপে গোপ্য হএ ৷ অনেক অবতার যিব বউদ সৰু দিনে পিব । { বিজে করি - অধিষ্ঠান করিয়া ; সন্থ = সাধু ব্যক্তি ] আগেই বলিয়াছি, যেখানে জগন্নাথের মহিমা এত বিরাট, সে ক্ষেত্রে শ্রীচৈতন্তের পক্ষে অবতার হইয়া যাওয়া অশ্রদ্ধেয় কল্পনা নহে। বুদ্ধ-অবতার-কল্পনা অচ্যুতানন্দ দাসরচিত শূন্তসংহিতা ও গুরুভক্তিগীতা এবং ঈশ্বর দাস-কুত চৈতন্যভাগবতে স্থান পাইয়াছে দেখি । অচ্যুতানন্দ দাস ( খুটিয়া ), ভাগবত, দারুব্রহ্মগীতালেখক জগন্নাথ দাস ও প্রেমভক্তিব্রহ্মগীত-লেখক যশোবস্ত দাস ( মল্লিক ) মহাপ্রভূর প্রিয়পাত্র ছিলেন। অচ্যুতানন্দ পরম বৈষ্ণব ছিলেন । প্রভুর আজ্ঞায় তিনি বৈষ্ণবের বেশ গ্রহণ করেন (শূ. স. প্রথম অধ্যায় ) বৌদ্ধ মতবাদের প্রভাব উড়িষ্যার চৈতন্য পূৰ্ব্ব বৈষ্ণব ধৰ্ম্মে দেখিতে পাই। কিন্তু অচ্যুতানন্দ প্রভৃতি বুদ্ধ-কল্পনা গ্রহণ করিয়াছিলেন, বৈষ্ণব ধৰ্ম্ম-মতের অংশীভূত ভাবিয়াই। কাজেই অচ্যুতানন্দ ও র্তাহার সঙ্গীদের প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধ বলা সমীচীন হইবে না । শূন্তসংহিতার দশম অধ্যায়ে দেখি শ্ৰীকৃষ্ণ স্বামকে