পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ , গতাগুগতিকভাবে অতি সঙ্কীর্ণ পারিবারিক জীবন যাপন করা ছাড়া তাহারা আর সমস্ত শক্তি ও প্রেরণা হারাইয়া ফেলে। ইহাতে পারিবারিক জীবনে কতকটা শাস্তি হয় বটে, কিন্তু তাহা মৃত্যুর শাস্তি । ইংরেজ যেমন ভারতবাসীকে অমাকুব করিয়া দিয়া দেশে শাস্তি বজায় রাথিয়াছে, আমাদের পারিবারিক জীবনেও শাস্তি ঠিক সেই রকম । স্ত্রীলোক এইভাবে ক্রমে মনুষ্যত্বের বা’র হইয় পড়ে। শিক্ষাদীক্ষায় বঞ্চিত হওয়ায় তাহারা উচ্চ অধ্যাত্মজীবনের মৰ্ম্ম গ্রহণ করিতে পারে না, ফলে এরূপ স্ত্রীর সহবাসে উচ্চ জীবন লাভ করা কোন পুরুষের পক্ষেও সম্ভব নহে । তাই যে স্ত্রী ছিল এক কালে ধৰ্ম্মাচরণে পরম সহায়, সেই স্ত্রীই হইল নরকের দ্বারস্বরূপ । আচার্য্য শঙ্কর যেমন তাহার দর্শনশাস্ত্রে প্রচার করিলেন যে, পুরুষই সত্য, প্রকৃতি মায়া, মিথ্যা, দুঃস্বপ্ন, তেমনই সমাজেও তিনি নারীকে নরকের দ্বার বলিয়া প্রচার করিলেন ; ফলে হিন্দুসমাজে নারীর স্থান খুবই হীন হইয়া পড়িল । আজ আমরা তাঙ্গরই ফলভোগ করিতেছি । পুরুষ ও প্রকৃতি সম্বন্ধে অন্য রকম ধারণা ছিল তন্ত্রে। তন্ত্র প্রকৃতিকে পুরুষেরও উপরে স্থান দিয়াছিল তাই তান্ত্রিকরা স্ত্রীলোকগণকে পূজা করিত, প্রত্যেক স্ত্রীলোককে জগদম্ব বলিয়া দেখিত, স্ত্রীলোকের উচ্ছিষ্টকে পরম পবিত্র জ্ঞান করিত । তান্ত্রিকরা যদি সমাজে প্রভাব বিস্তার করিতে পারিত, তাহা হইলে হিন্দুসমাজে নারীর স্থান একেবারে উন্টাইয়া যাইত, নারীই হইত উপরে এবং পুরুষ হইত নীচে । ভারতে স্থানে স্থানে যুগে যুগে যে এরূপ অবস্থা কখনও হয় নাই তা হাও নহে ৷ মহাভারতের যুগেও আমরা দেখিতে পাই বিখ্যাত লোকেরা বাপের -নাম অপেক্ষ মায়ের নামেই বেশী পরিচিত ; কৌন্তেয়, দেবকীনন্দন প্রভৃতি নাম তাহার দৃষ্টান্ত । যাহাই হউক, ভারতে তন্ত্র যেমন এপর্য্যস্ত কখনও বেদাস্তের প্রভাব সম্পূর্ণ ছাড়াইতে পারে নাই, তেমনিই সমাজেও স্ত্রীলোককে গভীর শ্রদ্ধার পাত্র, এমন কি পূজার পাত্র করা তাহাদের যে-আদশ, সে-আদর্শও কাৰ্য্যে পরিণত হয় মাই। উল্লিখিত সংক্ষিপ্ত বর্ণন হইতেই বুঝা যাইবে যে, 8இ ைே হিন্দুসমাজে মারীর স্থাল \ngി হিন্দুসভ্যতার স্বদীর্ঘ ইতিহাসে পুরুষ ও স্ত্রীর সম্বন্ধ লইয়া সকল প্রকার পরীক্ষাই হইয়া গিয়াছে, আজ সেই সকল সমন্বয়ের দিন আসিয়াছে। যেমন হিন্দুর অধ্যাত্মসাধনায়, হিন্দুর দর্শনশাস্ত্রে উদার সমন্বয়ের প্রয়োজন হইয়াছে, ভারতের স্বদীর্ঘ সাধনায় যাহা সার বস্তু আছে তাহ! উস্কার করিতে হইবে এবং জগতের অন্যান্য ধৰ্ম্ম ও সাধনায় যাহা কিছু শিখিবার আছে তাহাও গ্রহণ করিতে হইবে, তেমনিই সমাজ-জীবনেও ভারতবাসী যে অভিজ্ঞতা অর্জন করিয়াছে, বিচিত্রমুখী চেষ্টার ফলে জাতির দেহ-প্ৰাণ-মন যে ভাবে গড়িয়া উঠিয়াছে, তাহার হিসাব লইতে হুইবে, পাশ্চাত্য দেশ হইতেও শিক্ষালাভ করিতে হইবে, এই ভাবে এক গভীর উদার সমন্বয়ের উপর অভিনব ক্তশালী, অপূৰ্ব্ব গৌরবময় সমাজ-জীবনের প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে । হিন্দুর অধ্যাত্মসাধনায় বর্তমানে যে নূতন বিকাশ হইয়াছে ও হইতেছে তা হাতে নরনারীর সম্বন্ধেও পরিবর্তন অবশুম্ভাবী । এ সম্বন্ধে দুইটি জিনিষ বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। প্রথমতঃ, শ্রীরামকৃষ্ণের সাধনায় আবার তন্ত্র খুব উচ্চ স্থান পাইয়াছে। তিনি অধ্যাত্মসাধনায় এক নারীর নিকট হইতে বিশেষ সাহায্য পাইয়াছিলেন, ভগবানের মাতৃমূৰ্ত্তির উপাসনা করিয়াই তিনি পরম সিদ্ধিলাভ করিয়াছিলেন এবং সাধনার অঙ্গ হিসাবে নারীকে জগন্মাতার বিভূতিরূপে তিনি পূজা করিয়াছিলেন। মনুসংহিতা নারীকে অতিহীন চক্ষুতে দেখিয়াছিল, শঙ্কর নারীকে নরকের দ্বার বলিয়াছেন, শ্রীরামকৃষ্ণের সাধনায় নারীর এই অপবাদ দূর হইয়াছে, নারীই হইয়াছে স্বর্গের দ্বারস্বরূপ। দ্বিতীয়তঃ, গীতার শিক্ষা নূতন আলোকে আমাদের সম্মুখে প্রকাশিত হইয়া পুরুষ ও প্রকৃতির সম্বন্ধ বিষয়ে আমাদের ধারণার পরিবর্তন করিয়া দিয়াছে । ংখ্যদর্শনে প্রকৃতিকে নীচে স্থান দেওয়া হইয়াছে, শঙ্কর প্রকৃতিকে ছলনাময়ী মায়া বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন, গীতা বলিয়াছে ইহা কেবল প্রকৃতির নীচের অশুদ্ধ রূপ অপরা প্রকৃতি । ইহা ছাড়া প্রকৃতির এক উচ্চতর রূপ আছে, পরা প্রকৃতি । গীত। এই পরা প্রকৃতিকে ভগবানের সহিত প্রায় সমান করিয়া দিয়াছে, ভগবান এই পরমা প্রকৃতিকে ধরিয়াই বিশ্বলীলা