পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কীৰ্ত্তিক কবি মলোহর দাস £ woo. —ur চাকার তলায় ঘোরে মুখদুঃখ, আর তাহাদের চাকা কি একটি দিকেই,—দুঃখের দিকেই, নিশ্চল হইয়া থাকিবে ? পুরাণে, মহাভারতে, রামায়ণে একথা তো কোথাও লেখা নাই। দ্রৌপদীর দুঃখ, সীতার বেদনা, সাবিত্ৰী দময়ন্তী চিস্তা ইত্যাদি সব মহীয়সী মহিলার উপাখ্যান সে মুখে মুখে শুনিয়াছে। দুঃখ যে শরতের লঘু মেঘ—এ-ধারণা বদলাইবার কোন হেতু নাই । মনোহর দাস উমার চিন্তাক্লিষ্ট মুখের পানে চাহিয়া মাঝে মাঝে বলেন, ‘দিনরাত এত কি ভাব, উমা ? হাসিয়া উমা বলে, “দেখ-দুঃখ চিরকাল থাকে না।’ মনোহর দাস বলেন, “যদি মুখ না-ই আসে ? প্রবল বেগে মাথা নাড়িয়া দৃঢ় কণ্ঠে উমা প্রতিবাদ করে, তাহলে রামায়ণ-মহাভারত মিথ্যে ? রাতের পর দিন হয় কেন ! তুমি দেখো।' দিন কাটিয়া যায়, রাত্রিও কাটে ; মাস এবং বৎসর পরে পরে আগাইয়া চলে ; উমার ভাগ্যদেবতার মুখখানি প্রসন্ন হাস্তে ভরিয়া উঠে না। চন্দ্র-সূর্য্যের মত রামায়ণ-মহাভারতও সত্য ; পৃথিবীর কত নরনারী সুখদু:খের উত্থানপতনের কাহিনী রচনা করিয়া চলিয়াছে ; উমাদের ভাগ্যাকাশের মেঘথানিই শুধু চিরদিনের জন্য - সেকাহিনীকে অন্তরাল করিয়া রাখিবে? - লোলুnস যেমন উমাকে আদর করিয়া সম্বোধন করেন, উমা অধীর কণ্ঠে দ্রুত প্রশ্ন করিতে থাকে, ‘হঁ্যাগ রামায়ণ মহাভারত সত্যি তো ? সীতা, সাবিত্রী, "س-TERGYةT মনোহর বলেন, “সবই সত্যি, উমা, কিন্তু : fচর রাহুগ্রাসে ডুবেছে যে জন তার দুঃখ বল কে করে মোচন । আমাদেরও হয়েছে তাই ।” উমা ভ্র কুঞ্চিত করিয়া বলে, ‘ভাল লাগে না তোমার ছড়া। পুরুষমানুষ বসে থাকলে কখনো লক্ষ্মীশ্র থাকে ? কিন্তু উপায় কি ? ‘তোমার চেয়ে কিছু জানে না এমন লোকেরও তো ছ-বেলা দু-মুঠো জুটছে, তাদের বউরাও বাজু-পৈছে নিয়ে স্বথে ঘরকল্প করছে।’ t হো হো করিয়া মনোহর দাস হাসিয়া উঠেন। তীব্রস্বরে উমা বলে, ‘হাসলে য়ে ? ‘তোমার বাজু-পৈছে আর স্বশ্বে ঘরকন্নার কথা শুনে । বাঃ রে, উমা : সোনার জলুষ দেখে চোখে লেগেছে যে ঘোর । সোনার দুঃখে তাই সেখানে বইছে অঝোর ঝোর । বাঃ রে, উমা ! “যাও । কথায় কথায় মস্কর ভাল লাগে না। যেপুরুষের রোজগারের যোগ্যতা নেই—তার জীবনে ধিক। হাসিয়া মনোহর দাস বলেন, ‘ঠিক বলেছ : সোনাদানা আনে না ষে কিসের বড়ই তার । মুখখানি সে নাড়ে যদি পুড়ক তাতে খার। কল্যাণী বধু কলহমুখরা হইয়া উঠিল। অস্তরে তার সোনার অগ্নিশিখা হয়তো জলিয়াছিল, বাহিরে ক্রমশ সে-আগুনে তপ:ক্লিষ্ট উমার মতই সে শুকাইয়া উঠিতে লাগিল । কিন্তু শুধু চিস্তায় মানুষ শুকাইয়া যায় না ; অৰ্দ্ধাশনও তার হেতু বটে। মনোহর দাস মুখের হাসির মধ্যে ব্যথাকে ঢাকিয়া রাখিলেন । ব্যথার তার একটি হৃদয়ে যেমন বেস্করো বাজে আর একটি মনে তার ঝঙ্কার তুলে ; স্বতরাং দু-জনের ব্যথা দু-জনকেই ভিতরে ভিতরে অসহিষ্ণু করিয়া তুলিল । একদিন অদ্ধাশনক্লিষ্ট উমা রাগের মুখে বলিয়া ফেলিল, "হা-ঘরের হাতে পড়ে আমার এই দুৰ্দ্দশা । বাবা যদি আর কারও সঙ্গে আমার বিয়ে দিতেন ! মনোহর দাস স্নান হাস্তে বলিলেন, ‘তাহলে সত্যিই তুমি স্বর্থী হতে, উমা।’ ‘হতামই তো ।” মনোহর দাস কহিলেন ; ‘সুখ যদি রে হাটের বেগুন হ’ত । তারে দর করে আর পয়সা দিয়ে সবাই কিনে নিত ॥’ গান-শেষে মনোহর দাস দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন । উমা তখন সেখানে ছিল না। ইহার পর যে-অধ্যায় মনোহর দাসের জীবনের পাতাগুলিকে রহস্যময় করিয়াছে তাঙ্গা এই—