পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] মাথায় কালে রঙের টুপির উপর তামার চুড়া চকচক করিতেছে ; কেহ কেহ বা চেয়ারের উপর ঘোড়ায় চড়ার মতন করিয়া বসিয়৷ তামাকের ধোয়া ছাড়িতেছে । কেহ কেহ যেন বাসিন্দাদেরই পরিবারের লোকের মতে। তাহণদের কাজ করিয়া দিতেছে, বা তাহীদের সহিত গল্পগুজব করিতেছে । শহরের পাশ দিয়া যাইবার সময় ফৌজের কাওয়াজ দেখা যাইতেছিল, এবং অত গোলমালের মধ্যেও সৈন্যচালনার কর্কশ হুকুমের শব্দ শোনা যাইতেছিল । ম্যসিয় দুবুই, পারী অবরোধের সমস্ত সময়ট জাতীয় সৈঙ্গদলের অন্তভুক্ত ছিলেন ; এক্ষণে তিনি সুইজারল্যাণ্ডে স্ত্রীকস্তার কাছে যাইতেছিলেন ; পারী অবরোধ হইবার পূৰ্ব্বক্ষণেই সাবধান হইয়া তিনি তাহাদিগকে বিদেশে পাঠাইয়া দিয়াছিলেন । অনাহার উদ্বেগ ও পরিশ্রমে র্তাহার গদিয়ান মহাজনী ভুড়ি একটুও কমে নাই । তিনি মানুষের বর্বরতাকে দু’চারিটি কড়া কথা শুনাইয়া বেশ শান্ত নিরুপায় ভাবেই এই দারুণ দুদৈ বটাকে সহিয়া গিয়াছিলেন। এখন যুদ্ধ শেষ হইয়া যাওয়ার পর ফ্রান্সের সীমানার কাছে তিনি এই সবপ্রথম কতকগুলো জৰ্ম্মানকে দেথিলেন ; যদিও তিনি দুর্গপ্রাকারে উঠিয়া যুদ্ধ করিয়াছেন, এবং শীতের কনকনে রাত্রি জাগিয়া শহর পাহারা দিয়াছেন, তবু ইহার পুৰ্ব্বে জার্মানের চেহারা তাহার চোখে পড়ে নাই । এই-সব দাড়িওয়াল। সশস্ত্র লোকগুলা যেন নিজের বাড়ীর মতো বেপরোয় রকমে ফ্রান্সের বুকে যে আডিডা গাড়িয়া বসিয়াছে, ইহা দেখিয় তাহার পিত্ত জ্বলিয়া উঠিল । তিনি মনের মধ্যে একটা তীব্র স্বদেশপ্রীতির জ্বালা অকুভব করিতে লাগিলেন, কিন্তু যে অতিসাবধানতা তখন সমস্ত দেশটাকে পাইয়া বসিয়াছে তাহার দ্বারা তিনি সেই মনের জ্বালা দমন করিয়া রাfথলেন । র্তাহার কামরায় দুজন ইংরেজ ছিল, তাহারা গম্ভীর ভাবে কৌতুহলী দৃষ্টি দিয়া ফ্রান্সের দুর্দশ দেখিয়া বেড়াইতেছিল। তাহারা দুজনেই খুব হৃষ্টপুষ্ট, নিজেদের ভাষাতেই কথা কহিতেছিল, এবং মাঝে মাঝে কোনো একটা জায়গা দেখাইয়া চেচাইয়া উঠিতেছিল। श्रृंन्ध्र ० s te וי לצ־ একটা ছোট শহরে আসিয়া গাড়ী ষ্টেসনে থামিল। একজন জৰ্ম্মান সেনানায়ক গাড়ীর পাদানে আপনার লম্বা তরোয়াল ঠুকিয়া ঠকিয়া সশব্দ অtড়ম্বরে সেই কামরায় আসিয়া উঠিল। তাহার আকার প্রকাণ্ড ; উর্দির চাপে প্রকাণ্ড দেহখানি যেন আড়ষ্ট হইয়া আছে ; তাহার বিপুল দাড়ি চোখের কোল’ হইতেই আপ্লস্ত হইয়াছে । তাহার সেই লাল লম্ব দাড়ি অগ্নিশিখার স্তায় লকূলকৃ করিয়া দুলিতেছিল, এবং তাহার লম্বা কট। গোফ জোড় তাহার হাড়িপনা মুখ ছাড়াইয়াও দুই ধারে বাহির হইয়। পড়িয়াছিল, যেন সেইখানে তাহার মুখখান দুফাক হইয়া কাটিয়া গিয়াছে। ংরেজ দুজন কৌতুহল চরিতার্থ হওয়ার হাসিমুখে তাহাকে দেখিতে লাগিল । ম্যসিয় দুবুই এক থানা খবরের কাগজ পড়িতে মনঃসংযোগ করিলেন। তিনি, পুলিশ দেখিয়া চোরের মতে, এক কোণে জড়সড় হইয়৷ যেন নিজেকে লুকাইতে চাহিতেছিলেন । টুেন চলিতে লাগিল। ইংরেজ দুজন কোন কোন্‌ জায়গায় ঠিক যুদ্ধ হইয়াছিল তাহাই, স্থির কুরিবার জন্ত পরম্পর আলোচনা করিতে লাগিল । তাহারা একটা গ্রামের দিকে হাত বাড়াইয়। দেখাইতেই সেই জৰ্ম্মান সেনানী তাহার লম্বা পা দু-খান। ছড়াইয়৷ দিয়া পিঠটাকে খুব হেলাইয়া দিয়া ভাঙা ভাঙা ফরাশী ভাষায় বলিয়৷ উঠিল—এই গায়ে আমি এক ডজন ফরাশীকে মেরে ফেলেছি, শয়ের ওপর কয়েদ করেছি ! ইংরেজ দুজন এই খবরে উৎসুক হইয়া জিজ্ঞাসা করিল—এই গায়ের নাম কি ? —ফাসবুর্গ। আমি ফরাশী পাঞ্জিগুলোর - কান আচ্ছা করে মলে দিয়েছি । এই বলিয়া সে তাহার দাড়ির জঙ্গলের মধ্য হইতে মিট মিট করিয়া দুবুইয়ের দিকে চাহিয়া চাহিয়া খুব হাসিতে লাগিল । 鬱 টুেন যতগুলি গ্রামের মধ্য দিয়া যাইতেছিল তাহার সবগুলির বুকেই জৰ্ম্মানরা হাটু গাড়িয়া বসিয়াছে। গ্রামের ধারে ধারে সারা পথটাই জৰ্ম্মান সৈন্তে ছাইয়: রহিয়াছে দেখা যাইতেছিল ; কেহব। মাঠে দাড়াইয়।