পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ల్సి 8 শচীদুলাল বুঝিল এই প্রশ্নের মধ্যে কতখানি ব্যর্থ1 ও অভিমান পুঞ্জীভূত হইয়া আছে। শচীদুলাল এ প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে નાનિ না ; যেন সান্তনা দিয়া একথা ভুলাইয়া দিবার জন্যই বলিল—তুলসী তোমার জন্যে ব্যস্ত হয়ে অপেক্ষণ করছে, এস চটপট গাড়ীতে উঠে পড়। অভিলাষ গাড়ীর পোলা দরজার সামনে দাড়াইয়া দাড়াইয়া গাড়ীর মাথায় পোর্টমাণ্টে। বিছান। বাক্স ব্যাগ বোঝাই করা দেখিতে দেখিতে ভাবিতেছিল তাহার বাড়ীর কথা । তাহার পিতা যে তাহাকে না দেখিয়া দশ দিন থাকিতে পারিতেন না ; একবার অভিলাষ বৈদ্যনাথে বেড়াইতে গিয়া তাহাকে একদিন চিঠি দিতে ভুলিয়। গিয়াছিল বলিয়। তাহীর পিতা জবাবী টেলিগ্রাম করিয়াছিলেন ; দশদিন পরে নিজে বৈদ্যনাথে ছুটিয়া গিয়া পুত্রকে সঙ্গে করিয়া বাড়ী ফিরিয়াছিলেন ; অভিলাষের একদিন একটু অমুখ হইলে তাহার নাওয়া খাওয়া বন্ধ হইয়। যাইত, রাধাবিনোদের পূজা পৰ্য্যন্ত হইত না। তাহার সেই অভিলাষ কত দুরের নির্বান্ধব দেশে একাকী অসহায় নিঃসম্বল চলিয়া গিয়াছিল, তাহারই উপর অভিমান করিয়া ; কিন্তু তিনি একদিনের তরেও তাহাকে একটি কুশল-প্রশ্নও জিজ্ঞস করেন নাই ; তাহার বিপুল বিত্তের সিকি পয়সাও তাহাকে পাঠান নাই ; অভিলাষ যে-সমস্ত চিঠি তাহাকে বা তাছার মাকে লিখিত সে সবগুলিই অমনি না খুলিয়াই ফেরত যাইত। সে আজ এতকাল পরে বাড়ী ফিরিতেছে বলিয়া সংবাদ দিয়া পোষ্টকার্ডে পিতাকে চিঠি লিখিয়াছিল, কিন্তু সে চিঠিও হয়ত দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে পারে নাই। এই তিন বৎসর তাহার ভগ্নীপতিই তাহার বিদেশে পড়ার খরচ চালাইয়াছে ; আজ সে-ই তাহাকে তাহার দিদির কাছে আদর করিয়া ডাকিয়া লইতে আসিয়াছে—তাহার দিদিও তাঁহারই মতন মাতাপিতার মেহস্বৰ্গ হইতে বিতাড়িত, সে-ই ত তাহার দুঃখ বুঝিতেছে ! শচীদুলাল অভিলাষের পিঠ চাপড়াইয়া বলিল— অভি, দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবছ কি ? উঠে পড়। তুলসী রোধেবেড়ে থাবার নিয়ে তোমার জন্তে বসে রয়েছে... প্রবাসী—মাঘ, ১৩২১ [ ১১শ ভাগ, ২য় খণ্ড অভিলাষ একবার চারিদিকে চাহিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়। গাড়ীর পাদানে পা দিয়া গাড়ীতে উঠিতে গেল ; আবার প। নামাইয়া লইল। শচীদুলালের দিকে ফিরিয়া বলিল—গোসাইজী, আমি তোমার সঙ্গে যেতে পারব না। আমি মার কাছেই যাব। শচীদুলাল বলিল--তুলসী... —দিদিকে বোলো তার সঙ্গে শিগগিরই দেখা করব... —কিন্তু মার সঙ্গে দেখা করতে পাবে কি ? — না পাই তখন দিদির কাছেই ফিরব । শচাদুলাল দুঃখের হাসি হাসিয়া বলিল—তবে যাও একবার দরোয়ানের ধাক্ক খেয়ে ঘুরে এস ; আমি যাই, গিয়ে তোমার খাবার দাবার ঠিক করিয়ে রাখি গে। অভিলাষ একখানি ঠিক। গাড়ী ডাকিয় তাহার মাথায় আপনার জিনিষপত্র চাপাইয়। আবাগ্যের মেহনিকেতন, পিতামাতার কোলের মতন অপেন বাড়ীতে ফিরিয়া চলিল । প্রকাগু ফটক পার হইয়। বাগানের বঁাক। রাস্ত। ঘুরিয়া গাড়ী আসিয়া গাড়ীবারান্দায় দাড়াইতে ন দাড়াইতেই অভিলাষ কুষ্ঠিত মুখে শুষ্ক হাসি টানিয়। স্পদিত বুকে গাড়ী হইতে লাফাইয়া নামিয়া পড়িল । সম্মুখেই ইনাম সিং জমাদারকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিল— জমাদার, সব ভালো ত ? বাবা কোথায় ? জমাদার উত্তর দিবার পূৰ্ব্বেই ভিতর হইতে কৃষ্ণগোবিন্দ বাবু হাকিয়া বলিলেন—ইনাম সিং, ভিতরে কেউ যেন ন আসে । অভিলাষ থমকিয়া দাড়াইল । দেওয়ান ঘনশ্বাম তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া আসিয়া বলিলেন—বাবা, কৰ্ত্তার মত ত তুমি জানো ; এ বাড়ীতে তোমার থাকা সুবিধে হবে না, বলুতে বলুলেন । অভিলাষ বলিল—ঘনশুমে কাকা, আমি বাড়ীর ছেলে, এই বাড়ীতে নইলে কোথায় থাকব ? আপনাদের বাড়ীতে মোছলমান কোচমান সহিসও ত আছে, তাতে ত আপনাদের বাধে না ; আমি থাকলেই কি বিশেষ অন্যায় হবে ?