পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“কলতলার কাব্য” শ্ৰী বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় ↔ ( > ) বেশ জুতসই আহারের পর “ওদের” বোঝাইবাবু চেষ্টা করিতেছিলাম যে, আমাদের রাজনৈতিক অবস্থাটা নিতান্তই শোচনীয়। নৰ্থ-সঞ্চালনে বিরক্তি প্রকাশ করিয়া “ওরা” বলিল, “হ্যা, তোমাদের আব্দীর দিন-দিন বেড়েই যাচ্ছে ; গাটের পয়সা খরচ করে সরকার বাহাদুর রাস্তায়-রাস্তায় জলের কল পর্যন্ত করে দিলে, তবু তোমাদের মন পায় না—” । অনেক বুঝাইলাম যে, একমাইল আধ-মাইলের মধ্যে এক-একটা কল বসাইয়৷ সরকার-বাহাদুর জল-প্রার্থীদের মধ্যে কলহ-দ্বন্দ্বেরই স্বষ্টি করিয়াছে মাত্র, আর এই কলঙ্গ স্বষ্টিই সকল বিষয়ে সরকারের মূল নীতি, কিন্তু যেখানে যুক্তির নমুনা উক্তরূপ, সেখানে আর বৃথা বাক্য-ব্যয় করিয়া কি হইবে ? আর বিশেষতঃ যেখানে হারিয়াই খানিকট। তৃপ্তি পাওয়া যায়, সেখানে জিতিবার জেদটাই বা রে কোন মূঢ় ? একটু নিশ্চিন্ত থাকিলে বাঙ্গালী হয় রাজনীতি না হয় কাব্যের আলোচনা করিয়া থাকে। প্রথমটিতে নিরুৎসাঙ্গ হুইয়া আজ এই জ্বলের-কল-সম্পর্কে যে-একটা ব্যাপার ঘটিয়াছিল তাঙ্গাই লিপিবদ্ধ করিতেছি । টিটাগড়ের ষ্টেশন এবং কোম্পানীর চটকলের মাঝের স্বদীর্ঘ রাস্তাটার মধ্যখানে সিংহমুখে একটা জলের কল অদ্যাবধি দাড় করানো আছে । রাস্তাটার দুই পাশে এখন ছোটবড় অনেকগুলা বাড়ী উঠিয়াছে। কিন্তু পূৰ্ব্বে, দীর্ঘাস্তরালে দু-একটা দোকান ছাড়া আরকিছুই ছিল না। তখন যে-কোন সময়ই লক্ষ্য করিলে দেখা যাইত, কলটি দশ-বারোটি ঘড়া, বালতি ও অন্যান্য জলপাত্রে পরিবুত, একটিতে ক্ষীণ ধারায় জল গড়াইয়া পড়িতেছে এবং কয়েকজন পশ্চিম স্ত্রী ও পুরুষ বাঙ্গালার দুঃখ-কষ্ট ও নিজ-নিজ "মুল্লুকের” স্বথৈশ্বৰ্য্যের গল্প করিতেছে। একটা পাত্র ভরিয়া গেলে "ভাড়া” অর্থাৎ পালা লইয়া একচোট বিবাদ-বচস হইত। যে জিতিত সেই ন্যায়কে সপক্ষে করিয়া নিজ পাত্রটা জলের মুখে বসাইয়া দিত এবং প্রায়তঃ দেখা যাইত, যাহার রূপা-গালার বিচিত্র চুড়ী-পরা হাতখান বেশী খেলে, বিজয়-লক্ষ্মী সেই অঙ্গনারই সঙ্গিনী হইতেন । দুপুর-বেলায় এ-দৃশ্যপট বদলাইয়া যাইত। তখন আর লোকের ভিড় থাকিত না । নিকটের নারিকেল-বুক্ষটা হইতে দু-একটা রৌদ্রতপ্ত কাক নামিয়া আসিয়া, কলের শান ভাঙ্গিয় যেখানে-যেখানে জল জমা হইয়াছে, সেখানে দু এক চুমুক জল পান করিয়া স্বস্থানে প্রস্থান করিত। এই সময় প্রায়ই দেখা যাইত কলসটি মাথায় লইয়া একটি তের চৌদ্দ বৎসরের পশ্চিম মেয়ে দক্ষিণ দিকের একটা রাস্তা দিয়া মন্থৰ গতিতে আসিয়া কলতলায় উপস্থিত হইত। মুথের উপর তাহার এমন একটি কৌতুক-চঞ্চলতার ভাব ফুটিয়া থাকিত যাহা দেখিলে স্বতঃই মনে হইত কি গ্রীষ্ম, কি শীত, কি বর্যা— সকল ঋতুরই দিনগুলা, বিশেষ দ্বিপ্রহরের এই সময়টা তাহার নিকট বসস্তুের আকারেই বৰ্ত্তমান । অথচ, আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, এত অসময়ে নিরিবিলিতে অসিলেও বেচার। নিরুপদ্রবে কখনো তাহার গাগরীখানি ভরিয়া লইতে পারিান্ত না । কারণ, লোক না থাকিলেও তাহার আগমনের পূর্ব হইতেই কলের পাশে দুইটি ঘড় বসান থাকিত এবং সে আসিয়া কল টিপিলেই “আরে, হামারা ভাজা, হামারা ভাজা” বলিয়া চেচাইতে-চেঁচাইতে একটা ছেলে ছুটিয়া উপস্থিত হইত। প্রথম প্রথম মেয়েটা কিছুই বলিত না । কলসীটি সরাইয়া লইবার ভঙ্গিমায় বিরক্তির লক্ষণ পরিস্ফুট করিয়৷ চুপ করিয়৷ দাড়াইয়া থাকিত । ছেলেট, কলসীতে খানিকট জল জমা হুইলে সেই জল দিয়া কলসীটা উলটাইয়া:পালটাইয়া ধুইয়া লইয়। আবার ভৰ্দ্ধি করার জন্য বসাইয়া দিত। ইহাতে