পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ]

  • কলতলার কাব্য’

ર૭ সৰ্ব লেখা থেকে বাচ লুম এবং ভাঙা শরীর, ভাঙা মন নিয়ে গ্রামে ফিরে এলুম। খবর নিলুম—বাবা মারা গিয়েছে, মা মারা গিয়েছে, ভাই সংসার চালাচ্ছে। ঘরে সেতে আর মন সবুল না। সন্ধ্যার সময় বাড়ীর সামনে দিয়ে শ্বশুর-বাড়ীর রাস্তা ধৰ্বসুম ; কেউ চিনতে পারলে না । ‘পিপর'-তলায় ‘বঢ়মঠাকুরকে প্রণাম করে’ বললুম, “যতদিন না রোজগার করে ফিরে আসছি, অভাগা সংসারটাকে তুমিই দেখো ঠাকুর ।” স্বনরার গলা ধরিয়া আসিয়াছিল, একটু থামিল । মুন্না ফোস ফোস করিয়া কাদিতেছিল, ভাঙা গলায় বলিল, “মোতি, আউর সাবুত দেবেকে না পড়ি বে, আ তু হামরা ছাতিমে। লচ্চি—** লছিয়া অশ্বখ-গাছের আড়ালে কখন আশ্রয় লইয়াছে , কোন উত্তর দিল না । স্বনরা বলিতে লাগিল— “শ্বশুর-বাড়ী গিয়ে দেখলুম—সেখানেও সব ওলটপালট হ’য়ে গিয়েছে। অনেক খোজ করে পাওয়া গেল, লছিয়াকে নিয়ে মুন্না-কাকা বাঙ্গালা মুল্লুকে এসেছে, কোন কলে কাজ করে। বাড়ীতে আর টান নেই, আসে না কখন ! “তার পর এই দু' বছর কত কলে ঘুরেছি, কত সন্ধান করেছি কা’কে বলি ? শেষকালে,"আজ বছরখানেকের বেশী হ’তে চলল, এখানে এসেছি। খোজ করি, কোন ফলই হয় না । শেষে একদিন কলতলায় লছিয়াকে দেখলুম। কোন সেই ছেলেবেলায় একবার দেখেছি, ঠিক যে চিনতে পারলুম তা বলতে পারিনে, তবে মনে একটা খটকা লেগে রইল। সন্ধান লাগাতে থাকুলুম। অনেক খবর ইয়ার-দোন্তদের কাছে পাওয়া গেল ; অনেক খবর জল নিতে গিয়ে কলতলায় লছিয়ার কাছেই পাওয়া গেল ; ওটা ভারি বেহায়া হ’য়ে পড়েছে, হাউহাউ করে সব কথাই বলত । মোটের ওপর আমার আর কোন সন্দেহ রইল না যে মহাবীরজি মুখ তুলে’ চেয়েছেন—” s হলুমান মাহতো বলিল, “সে-সব নয় মানলুম ; কিন্তু এতদিন জেনেশুনেও তোর জরুকে নিসনি কেন ? সে-• জন্য তোর পঞ্চভাইয়েরা ত কোনমতেই মাফ করতে পারে না ?” স্বনরা বলিল, “সে পঞ্চভাইদের ‘মর্জি’ ; তবে তারও যে একটা কারণ না আছে এমন নয়। দেখলুম আমি ত একেবারে ‘বিলল্লা, ঘর-বাড়ী নেই, হাতে একটা কানা কড়ি নেই, সবদিন বোধ হয় ঠিক ভাতও জোটে না,— এর মধ্যে ও বেচারীকে এনে আর কষ্ট দিই কেন ? রোজ দেখাশোনা ত হচ্ছেই, খবর ত পাচ্ছিই । ও দাদার কাছে স্বপে আছে থাকু ; বরং ওর প্রতি যে খরচটা হ’ত সেটা জমিয়ে-জমিয়ে একট-কিছু ব্যবস্থা করা যাকৃ। এক-একদিন অবশ্য মনে হ’ত সব কথা খুলে বলি, কিন্তু ভয় হ’ত যদি কেউ বিশ্বাস না করে । তা হ’লে যেটুকু আশা মনের মধ্যে আছে ৩:৪ ভেঙে যাবে ; নিজের 'মেহরারুকে বোধ হয় জন্মের মত হারাতে হবে । আর-একটা কথা বে মনে হ’ত তা পঞ্চ ভাই দের সামনে না বললে মনে পাপ থেকে যাবে, সেটা এই—ভাব তুম লছিয়াকে সরিয়ে নিলে মুন্নাকাকা অন্য কোন আত্মীয়কে জোটাবে, কি পোষ্ণুপুত নেবে। তা হ’লে—ত হ’লে—মুন্না-কাক্কার সমস্ত টাকা —যার ওপর লছিয়ার মুখ এতটা নির্ভর "سRCR * মুন্না আর কথাটা শেষ করিতে দিল না। তাড়াতাড়ি টলিতে-টলিতে স্থনরার হাতটা ধরিয়া টানিয়া আনিয়া নিজের কাছে বসাইল, খাসিতে-হাসিতে বলিল, “আরে তুই চিরকেলে দুষ্ট, আমি খুব জানি।” তাহার পর হলুমানকে বলিল, “দোস্ত, খানিকটা সিঁদুর আনতে বল, মোতীয়া নূতন করে লছিয়ার কপালে লাগিয়ে দিক। ছেলেটা সব কথাই বলেছে ঠিক ; আর মিছে বললেও আমার লছির একটা বিলি করতে হবে ত ? আমি আর ক'দিন ? কি হো ভাই সব ?” সকলে বলিল “হু, হু, ঠিকু বাত, ঠিক্‌ বাত।” হলুমান মাহতে কিন্তু একটু বেকিয়া দাড়াইল, কহিল