পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৫২ যুদ্ধ করিতে পারে। আমেরিকা যে ইংলণ্ডকে ভয় করে, তাহাও নঙ্গে অথচ, কানাডা নিরাপদ আছে। ইউরোপের ডেনমার্ক, নরওয়ে, ইডেন,পোটুগাল প্রভৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশগুলির এমন সামরিক শক্তি নাই, যে, বৃষ্টং শক্তিশালী জাতিদের আক্রমণ তাঙ্গারা প্রতিরোধ করিতে পারে । তথাপি কেচ তাঙ্গাদিগকে আক্রমণ করে ন! 4 তাহাদের স্বাধীনতা হরণ করে না । ইহার কারণ কি ? একটা কারণ অবশ্য এক্ট, বে, এই-সব দেশ কেক আক্রমণ করিলে, শেষ ফল যাহাই হউক, ইহার কেন্ঠ সহজে স্বাধীনতা বিসর্জন দিবে না এবং ইহাদের দেশের বড় ৰড় লোকেরা বিশ্বাসঘাতক গৃহশক্র হুইবে না; ইহারা শেষ পৰ্য্যস্ত লড়িয়া দেখিবে ;-ইহা জানা কথা। দ্বিতীয় কারণ, এই যে, জামেনীর ফ্রান্স ৪ বেলজিয়ম আক্রমণ ব্যতিক্রমস্থল হইলেঞ্চ, " ইউরোপীয় লোকদের চক্ষে যে-সব দেশ সভ্য তাহাদিগকে আক্রমণ করা পাশ্চাত্য জনসাধারণের লোকমতের বিরুদ্ধ হইয়া দাড়াইয়াছে । এই সভ্যতার লক্ষণ ও প্রমাণ কি ? ইউরোপীয় কোন একটা ছোট দেশের কথা ধরুন। দেখিবেন, উহার নিজেদের ক্ষুদ্রতম গ্রামের সব কাজ হইতে আরম্ভ করিয়ু রাষ্ট্রের কাজ পৰ্য্যন্ত সমস্ত নিজের শৃঙ্খলা ও দক্ষতার সহিত চালাইতেছে। সাহিত্য, সঙ্গীত চিত্রাদি কলা, বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, প্রভৃতির চর্চা তাহারা নিজেরা করিতেছে, এবং অন্য দেশের সহিত এ বিষয়ে তাহারা কি আদান প্রদান করিবে, তাহার নিজে তাহ স্থির করিতেছে । নিজেদের শিক্ষাপ্রণালীর, বাণিজ্যের, পণ্যশিল্পের, ব্যাঙ্কের, রাস্ত ঘাট থাল রেলওয়ের, তাহারা নিজের চালক। তাহারা জগতের সভ্যতা-ভাণ্ডারে কিছু দিয়াছে এবং এখনও দিতেছে । তাঙ্গদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব লুপ্ত হইলে জগতের ক্ষতি হইবে। জামেনীর ধ্বংস নিবারণের পক্ষে এই একটা যুক্তি দেখান হইয়াছে, যে জার্মেন জাতির স্বতন্ত্র অস্তিত্ব না থাকিলে মানব জাতি বিজ্ঞান দর্শন ললিতকলা পণ্যশিল্প প্রভৃতি বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হইবে । 4 আমাদিগকে দেখিতে হইবেধে মামাদের পূর্বদ্বদিগের কীৰ্ত্তি যত মহংষ্ট থাকুক না কেন আমরা সভ্যজাতি-সমাজে প্রবাসী —বৈশাখ, X 99X [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড সকল বিষয়ে বর্তমান কালে পাংক্তেয় হইতে, সমকক্ষ বলিয়া বিবেচিত হইতে, পারি কি না। ভারতবর্ষ যদি জগৎকে সভ্যতার উপাদান এমন কিছু দিতে থাকে, যাহা হইতে মানব-সমাজ বঞ্চিত হইতে চায় না, তাহা হইলে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা-লোপ জাতিসমষ্টি সহ করিবে না। এখানে অনেকে বলিবেন, ভারতবর্ষ পরাধীন বলিয়া জগৎকে কিছু দিতে পারিতেছে না। ইহা সত্য হইলেও আংশিক সত্য মাত্র ; সম্পূর্ণ সত্য মঙ্গে। আমরা পরাধীন বলিয়। যে একটা গ্রাম বা একটা সত্বরকে ৪ তক্তক্যে চকচকো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখিতে পারি না, একটা কোন বিদ্যার ভাল করিয়ু চর্চা করিতে পারি না, কিম্বা আরও নানাদিকে উন্নতি করিতে পারি না, ইহা সত্য নহে। পরাধীনতা সত্বেও আমরা অনেক বিষয়ে আদর্শের দিকে বহুদূর অগ্রসর হইতে পারি। শুধু ভারতবর্ষের নয়,পৃথিবীর সকল দেশেরই স্বাধীনতারক্ষার সর্বপ্রধান উপায় হইবে মানব-জাতির আদর্শকেই আমূল বঙ্গলাইয়া ফেলা। ইগ ভারতবর্ষের অসাধ্য নহে r ভারতের শিক্ষকের রাজশক্তি দ্বারা নহে, ধৰ্ম্মোপদেশের দ্বারা, আধ্যাত্মিক শক্তি দ্বারা বহু হিংস্র অসভ্য মানুষকে শান্ত শিষ্ট সভ্য করিয়াছিলেন। ভারতের বর্তমান ও ভবিষাং আধ্যাত্মিক নেতারা পৃথিবীর সমুদয় জাতিকে ইহা হৃদয়ঙ্গম করাইতে সমর্থ হইতে পারেন, যে, ব্যক্তিবিশেষের সম্পত্তি চুরি অপেক্ষ এক একটা "দেশের ৪ জাতির সম্পত্তি চুরি গুরুতর অপরাধ, একজন মানুষের প্রাণবধ অপেক্ষ যুদ্ধে বহু মানবের প্রাণনাশ এবং এক একটা জাতির স্বতন্ত্র-অস্তিত্ব-লোপ গুরুত্বর ‘ অপরাধ ; দুর্বল অনগ্রসর জাতিদিগকে ১৫২০ বৎসরের অনধিক নির্দিষ্টকাল শিক্ষা দিয়া নিজ কাৰ্য্যনিৰ্ব্বাষ্ট্রে সমর্থ করিয়া দেওয়াই শক্তিশালী জাতিদের বৈধ কাজ, তাহাদের সম্পত্তি শোষণ ও তাহাদিগকে নিবীৰ্য্য করিয়া পদানত রাপ দস্থ্যতা মাত্র ; হৃদয় মন আত্মার বিভবই প্রকৃত বিভব, ধর্শ্বে জলাঞ্জলি দিয়া সাংসারিক ঐশ্বৰ্য্যলোলুপ হইলে কেবল ধ্বংসের পথেই অগ্রসর হইতে হয়। ভারতবর্ষ যদি কাহারও সম্পত্তির উপর, কাহারওঁ দেহমনের উপর লোভ না রাখেন, যদি ভারতবর্ষ আন্তরিক সত্যনিষ্ঠা অহিংসা ও মৈত্রী দ্বারা চালিত হন, তাহা । হইলে তিনি অভয় পদ পাইবেন, অপর সকলকে সেই ভাবের বশবৰ্ত্তী করিতে পারিবেন।